২০১২ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচটা মাত্র ২ রানে হেরে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি লাল-সবুজের দল। এবার এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে সেই পাকিস্তানকেই ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে মাশরাফি বাহিনী। ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এই মাশরাফি বাংলাদেশের নায়ক। এই মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। এই মাশরাফি বাংলাদেশের আসল নেতা। এই মাশরাফিকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে।
একটু বেশি নাটকীয় হয়ে গেল? হলোই বা। ম্যাচের শেষাংশটা তো এমনি নাটকীয়ই ছিল। এশিয়া কাপের ফাইনালটা যখন ঠিক হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে মনে হচ্ছিল, ঠিক তখনই সাহসের অনন্য উপাখ্যান লিখে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে আনলেন। এটা জেনেও যে, বোলিং প্রান্তে পাকিস্তানের সেরা বোলার। প্রথম দুই বলে দুটি চার। বাংলাদেশ অধিনায়কের ১২ রানের ইনিংসটিই তো বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিল। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টির যে দুর্দান্ত চিত্র এঁকে ফাইনালে গেল বাংলাদেশ, বিশ্বাস করুণ তেমন চিত্র আঁকা পিকাসোর পক্ষেও সম্ভব নয়। এমন গল্প লেখা শেক্সপিয়ারের কাজ নয়। এ অন্য কোনো জগতে লেখা গল্প। যে নাটকের প্রতিটি পর্বে রোমাঞ্চ, যে নাটকের প্রতিটি ফ্রেমে হাসি-কান্না-প্রার্থনা এক হয়ে মিশে আছে।
মাশরাফি অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে শেষটা টানলেন। কিন্তু পারফরম্যান্সটা তো টিম বাংলাদেশের। এখানে মাহমুদউল্লাহর শেষ চার, সৌম্যর বল প্রতি রানের ৪৮-সবই সমান অবদান রেখেছে। দল হয়েই খেলেই ফাইনালে পৌছে গেছে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে পাকিস্তানকে বেঁধে ফেলা গেছে ১২৯ রানে। বাংলাদেশ ও এশিয়া কাপ ফাইনালের মধ্যে দূরত্বটা ছিল তাই ১৩০ রানের। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ইনিংসের গল্পটা ছিল পর্যন্ত আশা ভাঙা-গড়ার। সৌম্য-সাব্বিরের পর সৌম্য-মুশফিক—একটা করে জুটি গড়ছে, আশা জাগিয়ে আবার ভেঙেও যাচ্ছে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন তামিম। বাবা হওয়ার পর প্রথম মাঠে নেমে তামিম শুরুটা ভালোই করেছিলেন। মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই মোহাম্মদ আমিরের বলে ছক্কাও মেরেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ আর টিকতে পারলেন না। ৪ বলে ৭ করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন। গত ম্যাচে ৮০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলা সাব্বির আজ বেশিদূর যেতে পারেননি। আউট হয়ে গেছেন ১৫ বলে ১৪ রান করে।
এরপর দলের হাল ধরেছেন মুশফিক ও সৌম্য। বাঁহাতি ওপেনার কিছুদিন ধরেই ফর্মের সঙ্গে যুঝছিলেন, আজ সব হিসেব চুকিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন নেমেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মেনে ৪৮ বলে ৪৮ করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন যিনি, সেই মুশফিকও কিছুটা রানখরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ বলে ১২ রান করে সেটি কাটিয়ে ওঠার আশা জাগিয়ে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরলেন বিতর্কিত এলবিডব্লুতে।
বাংলাদেশের ভরসা সাকিবও আজ পারলেন না। স্কুপ খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন আমিরের বলে। কিন্তু এরপরের গল্পটাই তো আজ সবচেয়ে প্রিয়। মাশরাফির ৭ বলে ১২ আর মাহমুদউল্লাহর ১৫ বলে ২২ রানের ইনিংসে ফাইনালে চলে গেল বাংলাদেশ।
সদ্যই বাবা হওয়ার খুশি নিয়ে দলে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল। মোহাম্মদ আমিরের বলে দারুণ এক ছয় মেরে ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন লম্বা ইনিংস খেলার। কিন্তু প্রত্যাবর্তনটা খুব বেশি স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না বাংলাদেশের এই বাঁ-হাতি ওপেনার। আউট হয়ে গেলেন ৭ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাব্বির। নবম ওভারে সাব্বিরকে বোল্ড করেছেন আফ্রিদি। ১৪ রান করে ফিরেছেন সাব্বির। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে আবার ৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন সৌম্য। ১৪তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে দারুণ এক ডেভিভারিতে সৌম্যকে বোল্ড করেছেন আমির। ৪৮ রান করে ফিরেছেন সৌম্য।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের সামনে স্কোরবোর্ডে ১২৯ রান জমা করতে পেরেছে পাকিস্তান। ৩০ বলে ৪১ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন শোয়েব মালিক। ৪২ বলে ৫৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন সরফরাজ আহমেদ।
বাংলাদেশের পক্ষে দারুণ বোলিং করে তিনটি উইকেট নিয়েছেন আল-আমিন হোসেন। দুইটি উইকেট গেছে আরাফাত সানির ঝুলিতে। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৪ রানের বিনিময়ে একটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।