আতিকুর রহমান মানিক : মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আরও একটি বছর, ২০১৫। বিদায়ের বেলাভূমিতে দাড়িয়ে থাকা এ বছরের বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজারে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
২০১৫ সালের শুরুতে জানুয়ারীর প্রারম্ভেই বিরোধী দলের ডাকে সারা দেশে লাগাতার হরতাল-অবরোধ শুরু হলে মারাত্মক বিপর্যয় ও লোকসানের মুখে পড়ে কক্সবাজাররের পর্যটন শিল্প। কক্সবাজারের বন-পরিবেশ-পাহাড় ও প্রকৃতি ধ্বংস করে নির্মিত “সরকারি কর্মচারীদের ৫১ একর আবসন প্রকল্প” ১ ফেব্র“য়ারী হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে অবৈধ ঘোষনা করা হয়। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও মাতারবাড়ীতে নির্মিতব্য কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৯ ফেব্র“য়ারী বদলি করা হয় জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিনকে। থাইল্যান্ড ও মলয়েশিয়ার জঙ্গলে অবৈধ অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কারের পর বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠে। এর প্রেক্ষিতে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রশাসন হার্ড লাইনে অবস্থান নেয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৮ মে ভোর রাতে মানব পাচারের অন্যতম রুট টেকনাফের মানব পাচারের গডফাদার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারী ধলু হোছন, জাহাঙ্গির ও জাফর টেকনাফ সৈকত এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়।
১৭ জুন নাফনদীতে টহল দেয়ার সময় বিজিবি টহল দলের উপর অতর্কিত হামলা করে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মায়ানমারে নিয়ে যায়। এ সময় বিজিপির গুলিতে আহত হন বিজিবি সদস্য বিপ্লব। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিপুল উত্তেজনা ও কয়েক দফা পতাকা বৈঠকের পর অবশেষে ২৫ জুন রাজ্জাককে হস্তান্তর করে মায়ানমার। মায়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবার কয়েকটা চালান আটক করার পেছনে ভুমিকা রাখার জন্য রাজ্জাককে অপহরণ করা হয় বলে পত্র-পত্রিকার খবরে উঠে আসে।
১ জুন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী এলাকায় ৬ লাখ ৮০ হাজার পিছ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হন পুলিশের বিশেষ শাখার এ এস আই মাহফুজুর রহমান। তখন তার প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার করা ডায়রিতে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত ১৪ জনের নাম ঠিকানা ও তাদের সাথে লেনদেনের ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার তথ্য পাওয়া যায় বলে জানায় র্যাব। আটক ব্যক্তির সাথে ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ওসি আবুল হোসেন দেওয়ানসহ ১১ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
অবিরাম বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে ২৪ জুন ভোর থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় কক্সবাজার শহর। হাজারো বাসা বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে এসময়। ৯ জুলাই রাতে প্রবল বন্যায় বাঁকখালী নদীতে হেলে পড়ে জেলার একমাত্র মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের একাংশ।
২৭ জুলাই ভোর রাতে শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া কবরস্থান পাড়ায় পাহাড় ধ্বসে মা-মেয়েসহ ৫ জন নিহত হয়। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোষ্ট গার্ড ও র্যাব সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ৩১ জুলাই কক্সবাজার উপকুলে আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় কোমেন। উচ্চ জোয়ার ও জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার উপকুলীয় ৬২ হাজার একর আয়তনের চিংড়ি চাষের ঘের।
৩০ অক্টোবর কক্সবাজার কলেজ গেইট সংলগ্ন জানার ঘোনা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়। ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে এয়ার ডিফেন্স রাডার উদ্ধোধন করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
নাশকতা মামলায় চার্জশীট ভুক্ত হওয়ায় ২৪ নভেম্বর বরখাস্থ হন পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল। তৎস্থলে প্যানেল মেয়র-১ জিসান উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার কথা থাকলেও সপ্তাহব্যাপী নানা নাটকীয়তার পর ১ ডিসেম্বর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মাহবুবর রহমান মাবু ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। শহরতলীর রুমালিয়ার ছড়া, সমিতি বাজার ও পাহাড়তলীতে ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করা শীর্ষ সন্ত্রাসী দুই সহোদর সিফাত-আরফাত নিহত হয় ৯ ডিসেম্বর। পৌর শহর থেকে ৩৫ কি.মি দূরে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর ৩ দিনের সফরে আসেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। ২১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফরে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। প্রতি বছর থার্টি ফার্ষ্ট নাইটে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা বর্ষবরনের রাত্রিকালীন যাবতীয় অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে ২৭ ডিসেম্বর আদেশ জারি করেন জেলা প্রশাসন। নাশকতার কয়েকটি মামলায় চার্জশীট ভুক্ত আসামী হওয়ার ফলে ৩০ ডিসেম্বর বরখাস্ত হন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ। বিদায় নিচ্ছে ২০১৫, দ্বারে কড়া নাড়ছে নতুন বছর ২০১৬। নতুন বছরের অনাগত দিনগুলো শুভ সংবাদ বয়ে আনুক সমুদ্র শহর কক্সবাজার ও উপকুলীয় এ জেলাবাসীর জন্য।