অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছর অষ্টম শ্রেণীতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদি। বর্তমান মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযোজন এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বা কলেজে পর্যায়ক্রমে নবম ও দশম শ্রেণী খোলা হবে। যেসব কলেজে স্নাতক বা ডিগ্রি কোর্স চালু আছে, ওইসব কলেজে কেবল স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা চালু থাকবে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক স্তর পঞ্চম শ্রেণীর পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণী এবং মাধ্যমিক স্তর দ্বাদশ শ্রেণীতে উন্নীতের অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষার কাঠামোয় পরিবর্তন আসছে।
আগামী ২০১৮ সাল পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু থাকবে। পরে শুধু অষ্টম শ্রেণীতেই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা হবে। কেননা, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের যোগ্যতাভিত্তিক পাঠ্যক্রমে শিক্ষা দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত জ্ঞানভিত্তিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ করত। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কাজ করছে। ২০১৭ সালে নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে হবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই।
দেশে সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক। বর্তমানে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিন্ম-মাধ্যমিক, নবম-দশম শ্রেণী মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা শেষে শুরু হয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। সেখানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা এসএসসিতে উত্তীর্ণরা পড়ালেখার সুযোগ পায়।
সাধারণ শিক্ষায় ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, জাতীয়করণকৃত ২৬ হাজার নিবন্ধিত প্রাথমিক স্কুল ছাড়াও নি¤œ মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুলে সংযুক্ত প্রাথমিক স্কুল, কমিউনিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান। মাদরাসা শিক্ষায় ইবতেদায়ি (প্রাথমিক) স্তরে ইবতেদায়ি মাদরাসা, জুনিয়র মাদরাসা রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হুমায়ূন খালিদ জানান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। এছাড়া এসব বিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, শিক্ষকদের বেতনসহ সার্বিক কার্যক্রম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখভাল করবে।
এদিকে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তিনটি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী খোলা, কলেজগুলোতে নবম-দশম শ্রেণীর জন্য কক্ষ নির্মাণ করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে এসবের বিষয়ে পরোক্ষভাবে নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষানীতিতে প্রাথমিককে অষ্টম শ্রেণী এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীকে মাধ্যমিক স্তর হিসেবে প্রবর্তনের কথা বলা আছে। শিক্ষানীতিতে এ ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার আরো দুটি স্তরের কথা আছে। তা হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক এবং উচ্চশিক্ষা। ইতিমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তর প্রবর্তনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিকের মধ্যে পুরনো ৩৭ হাজারে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী খোলা হয়েছে। এই স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই ও শিক্ষা উপকরণ দেয়া হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা স্তরে মৌলিক কোনো পরিবর্তন নেই। তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় সবক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করেছে। প্রাথমিকের বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ে তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, জনবল ও লোকবলের সংকট, প্রশাসনের মধ্যে সংযোগের ঘাটতির কারণে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীতকরণে নানা বাধা রয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করতে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার অভাব রয়েছে। তবে সমন্বিত শিক্ষা আইন করার মাধ্যমে অনেক সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।