সানিয়া আজাদ
বলে কি মেয়েটা? আহসান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নতুন বিয়ে করা ঝলমলে মেয়েটার দিকে। পৃথিবীতে এত কিছু থাকতে এই তার চাওয়া? আহসান বুঝতে পারছে না মেয়েটার মাথায় ছিট আছে কিনা। সে সত্যই সন্দিহান চোখে বউ এর দিকে তাকিয়ে রইল। যেন ছিটগ্রস্ত মেয়েটার ছিটের রহস্য এখুনি উদঘাটন করেই ছাড়বে।
১৯৯৮ সালের এক বর্ষা রাতে ঝিলমিল এর দু’চোখ বেয়ে টপটপ ফোঁটা পড়তে দেখে বিধাতা বুঝি নীরবে মুচকি হেসেছিলেন।
ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট এ এপ্লিকেশন করার জন্য পাসপোর্ট সাইজ এর সদ্য তোলা তিনকপি ছবি আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করার জন্য অনেক খুঁজতে খুঁজতে এক ডাক্তারের চেম্বারে এলো।
কয়েকজন পেশেন্ট ডাক্তারবাবুর জন্য অপেক্ষা করছেন, কারণ তিনি তখনো চেম্বারে পৌঁছাননি। ঝিলমিল ছবি আর কাগজগুলো ডাক্তারবাবুর এসিসট্যান্টের কাছে দিয়ে এক ফাঁকে সত্যায়িত করে দেওয়ার অনুরোধ করে অপেক্ষা করতে লাগল।
একসময় ডাক্তারসাহেব আসলেন এবং যথারীতি সিরিয়াল অনুযায়ী রোগী দেখতে লাগলেন। ঝিলমিল এসিসট্যান্টকে একবার ভেতরে কাগজগুলো দেয়ার অনুরোধ করল কারণ রাত বেড়ে যাচ্ছে, সে রাস্তা চেনে না। আসার সময় জায়গায় জায়গায় জিজ্ঞাসা করে করে আসতে হয়েছে। ডাক্তার একটু পরে করবে বলে সেগুলো বাইরে পাঠিয়ে দিলেন।
অপেক্ষা করতে করতে রাত গভীর হচ্ছে দেখে সে ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠল। এসিসট্যান্ট কে আবারো বলাতে সে ঝিলমিলকেই ভেতরে যেতে বলল। কয়েকজন পেশেন্ট তখনো অপেক্ষা করছে। ঝিলমিল সালাম দিয়ে ভেতরে যেতেই ডাক্তার তার দিকে তাকিয়ে বলল- কি সমস্যা?
– না স্যার, শারীরিক কোন সমস্যা নেই, আমি কিছু পেপারস সত্যায়িত করার জন্য এসেছিলাম।
– তাহলে বাইরে অপেক্ষা করুন। পেশেন্ট দেখা শেষ হলে করে দেব।
– স্যার আমি বিকেল থেকে অপেক্ষা করছি। এই এলাকায় নতুন এসেছি। এখন রাত সাড়ে দশটা বাজে। অন্ধকার অচেনা রাস্তাঘাট ,আপনি যদি সিগনেচার করে দেন আমি বাইরে গিয়ে সিল মেরে নেব। একথা শুনে ডাক্তারবাবু খুব বিরক্ত হলেন।
সোজা ঝিলমিল এর দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বললেন – আপনার কাগজ সত্যায়িত করার জন্য আমি ডাক্তারি পাশ করিনি। বাইরে অপেক্ষা করুন, রোগী দেখা শেষ হলে আসবেন।
একথা শুনে ঝিলমিল খুব অপমানিত বোধ করল। আর এক মুহূর্তকাল তার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করল না। ডাক্তারবাবুর উপর অনেক রাগ হচ্ছিল কিন্তু কিছুই করার ছিল না। অসহায়, ক্রুদ্ধ ঝিলমিল বাড়ীর পথে পা বাড়াল।
এর ঠিক তের বৎসর পর পারিবারিক ভাবেই এক ডাক্তারের সাথে তার বিয়ে ঠিক হল। তাই বিয়ের পর তার বরের কাছে প্রথম আবদার ছিল ‘যদি কোন ছাত্রছাত্রী চাকরীর জন্য কোন কাগজ বা ছবি সত্যায়িত করতে আসে তবে সবার প্রথমে সে তা শেষ করে তারপর রোগী দেখা শুরু করবে।’ একথা শুনে বর তো হতভম্ব। সরু চোখে বউ এর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল পাগলামীর আর কোন লক্ষণ আছে কি না তা বোঝার জন্য।
তবে ঝিলমিল এর দৃঢ় বিশ্বাস সেদিনের সেই ঘটনার পরপরই তার ভেতরের অব্যক্ত, অসহায় ক্রুধ দেখে উপরওয়ালা তার জন্য এই ডাক্তারবাবু কে বরাদ্দ করেছিলেন। এটা উপরওয়ালারই দেয়া বর। এই আজীব দুনিয়ায় কি না সম্ভব!!!!!