বাঁকখালী নদী মানেই কক্সবাজার। কক্সবাজারের অস্থিত্বের সাথে বাঁকখালীর নিবিড় সম্পর্ক। কক্সবাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে বাঁকখালী। আমাদের অর্থনৈতিক শিরা নামে পরিচিত বাঁকখালী নদী ছাড়া কক্সবাজারের অস্থিত্ব কল্পনা করাই যায় না। কিন্তু সেই বাঁকখালীই আজ অস্থিত্বহীনতার মুখে। দখলবাজদের থাবায় দখল, দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়ে নদীটি চরম হুমকির মুখে। তা হতে দেয়া যাবে না। বাঁকখালী মরে গেলে বাঁকখালী পাড়ের মানুষেরাও মরে যাবে। তাই যেকোন মূল্যে বাঁকখালীকে বাঁচাতে হবে। তার জন্য প্রথমেই মানুষকে সচেতন হতে হবে। জনগণের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মৃতপ্রায় বাঁকখালী রক্ষা করতে হবে।’ কক্সবাজারের সমস্যা আজ সমস্যা নয়, কক্সবাজারের সমস্যা এখন কক্সবাজারের মানুষ। ১৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকাল ৩টায় পৌরসভা সম্মেলন কক্ষে বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘বাঁচলে বাঁকখালী, বাঁচবে কক্সবাজার’ শীর্ষক বাঁকখালী সংলাপে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সংগঠনের সভাপতি কক্সবাজার টাইমস‘র সম্পাদক ও প্রকাশক সরওয়ার আলম’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শামস্ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও মডারেটর এর দায়িত্ব পালন করেন বাঁকখালী সংলাপের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক কোষ প্রণেতা আজাদ মনসুর।
সংলাপে বক্তব্য অংশ নেন, কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি নদী গবেষক মোঃ মনির হোসেন, ব্যারিষ্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক হিমছড়ীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসানুর রশীদ, দৈনিক সমুদ্রকন্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মঈনুল হাসান পলাশ, কক্সবাজার পৌরসভার সচিব মোঃ সামছুদ্দিন, অনলাইন রিপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আনছার হোসেন, সুজনের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কেন্দ্রী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক মোহাম্মদ উর রহমান মাসুদ, সেভ দ্যা নেচার এর জেলা সভাপতি কল্লোল দে চৌধুরী, বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডিশকভার টি.কে সম্পাদক আবদুল্লাহ নয়ন, পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ, নাটাব এর সভাপতি কামরুল হাসান, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক এর সভাপতি কবি শামীম আকতার, পরিবেশকর্মী আ.ন.ম. মোয়াজ্জেম হোসেন, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক সভাপতি দীপক শর্মা দীপু, জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটির কক্সবাজার জেলা সভাপতি এস.এম. ছৈয়দ উল্লাহ আযাদ, এপেক্স ক্লাব কক্সবাজার এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জামাল হোছাইন চৌধুরী, ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন এর সিনিয়র শিক্ষক সাংবাদিক নুরুল আমিন হেলালী, আইনজীবী ও সমাজকর্মী এড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নদী পরিব্রাজক দল জেলা সভাপতি সাংবাদিক আবদুল আলিম নোবেল, দৈনিক বাঁকখালীর সিনিয়র রিপোর্টার সিটিএন এর চীফ রিপোর্টার সাংবাদিক সাহেদ মিজান, এশিয়ান টিভির রামু প্রতিনিধি সাংবাদিক আরোজ ফারুক, নদী পরিব্রাজক দল জেলা সাধারণ সম্পাদক মিনার হাসান, সার্ক মানবাধিকার সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ তুহিন, বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মনজুর আলম, বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সংগঠনের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নেজাম উদ্দিন শাওন প্রমূখ। বক্তারা আরও বলেন, বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলন নয়, গড়ে তুলতে হবে কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন। ‘পূর্বপুরুষরা কক্সবাজারকে যেভাবে রেখে গিয়েছিলেন আমরা তা রাখতে পারিনি। দখল-দূষণ করে বাঁকখালী নদীকে আমরা গলাটিপে হত্যা করেছি। শুধু বাঁকখালী নয়, পুরো কক্সবাজার আজ দখলদারদের থাবায়। আমাদের হতাশ হলে হবে না। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান খুঁজতে হবে। নিতে হবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। দখলবাজদের চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করতে হবে। দখলবাজদের তালিকা জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। দখলবাজরা কিসের প্রভাবশালী? দলমত এগিয়ে এসে দখলবাজদের রুখতে হবে। তবেই আমাদের বাঁকখালী তথা কক্সবাজার বাঁচবে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী বাংলাদেশের অস্থিত্ব। কিন্তু নদীগুলোর মৃত্যুঘন্টা বেজে উঠেছে। দখল, দূষণ ও ভরাট করে সর্বত্র নদীকে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের পানিতে লবণাক্ততা অসহ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে। তাতে ব্যাহত হবে নদীপাড়ের শস্য উৎপাদন। তাই বাঁকখালী রক্ষার সমাধান এখনিই খুঁজতে হবে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবু আলা ছিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশের নদী গুলো একে একে দখল হয়ে যাচ্ছে। নদী শাসনের জন্য ৫ টি পৃথক আইনের ধারা রয়েছে। এসব ধারা একেকটি অন্যটির সাথে সাংঘর্ষিক। নদী শাসন আইনের দূর্বলতার কারণে নদীগুলো রক্ষা হচ্ছে না। আইনের সংস্কারের মাধ্যমেই নদী রক্ষায় ভূমিকা নিতে হবে।