পাঁচবারের এশিয়া চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান এশিয়া চ্যাম্পিয়ন, টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন-এই বিশেষণগুলোও গতকাল বাঁচাতে পারে নি ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলঙ্কাকে। এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে এসব বিশেষণকে ‘ভূয়া’ প্রমানিত করেছে বাংলার একদল তরুণ তুর্কি। সাব্বির-সাকিব-আল-আমিনরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে লঙ্কান দূর্গ। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে সিংহলের সিংহদের বিরুদ্ধে ২৩ রানের এ জয় দেশের ক্রিকেট ভক্তদের শুধু আনন্দের জোয়ারেই ভাসায় নি এশিয়া কাপের পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানেও তুলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও এশিয়া চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে এটিই প্রথম জয় মাশরাফি বাহিনীর।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের দিনের শুরুটাই হয়েছিল দুসংবাদ দিয়ে। ইনজুরির কারণে মালিঙ্গাকে ছাড়াই মাঠে নামতে হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ম্যাথিউসের শুরুটাও টস হার দিয়ে। তবে টসে জেতার হাসিটা প্রশস্ত হয়নি মাশরাফির। ‘লঙ্কাকাণ্ডে’ রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে বাংলাদেশি দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ও সৌম্য সরকার। দলীয় ২৬ রানে রান আউটে ফিরেন মুশফিকও। মালিঙ্গা বিহীন লঙ্কান বোলিং আক্রমণের সামনে তখন কাঁপছে বাংলাদেশ। এরপর মিরপুরে বয়ে গেল এক ঝড়, সাব্বির ঝড়। সাব্বিরের সাথে ছিলেন বাংলাদেশের অসংখ্য জয়ের সারথি সাকিব আল হাসান। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ৮২ রানের জুুটিতে সাকিব অনেকটা দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। লঙ্কান বোলারদের সামলানোর দায়িত্ব একাই নেন সাব্বির। কুলাসেকারা-পেরেরা-হেরাথদের কচুকাটা করে ৫৪ বলে ৮০ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন সাব্বির। সাব্বিরের ইনিংসে ছিল ৩ বিশাল ছয় ও ১০টি চারের মার। দলীয় ১০৮ রানে চামিরার বলে জয়সুরিয়ার হাতে ক্যাচ দিলে থামে সাব্বির ঝড়। সাকিবের ৩৪ বলে ৩২ ও মাহমুদউল্লাহর ১২ বলে অপরাজিত ২৩ রানে কল্যাণে ২০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাড়ায় ৭ উইকেটে ১৪৭। লঙ্কান পেসার দুশমান্তা চামিরা ৩০ রানে তিন উইকেট নেন।
লঙ্কানদের রান তাড়ার শুরুটা হয় সৌম্য সরকারের ক্যাচ মিস দিয়ে। তাসকিনের করা দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান দিনেশ চান্দিমাল। পরে অবশ্য অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়েছেন অভিজ্ঞ দিলশানকে। সাকিবের করা প্রথম বলেই আকাশে তুলে দেন দিলশান। সেই বলকে বাঘের
ক্ষিপ্রতাই দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তালুবন্দি করেন সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে চান্দিমাল ও শেনান জয়সুরিয়ার ৫৬ রানের জুটি কিছুটা ব্যাকফুটে টেলে দিয়েছিলো টাইগারদের। তবে সেখান থেকে বাঘের মতোই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ দল। লঙ্কানদের বিপর্যয়ের শুরুটা হয় মাহমুদউল্লাহর হাতে। চান্দিমালকে তাসকিনের ক্যাচ বানান গত ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। এরপর সাকিব-আল আমিন-মাশরাফি-মুস্তাফিজদের মারাত্বক বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে যায় ১২৪ রানে। চান্দিমাল ৩৭, শেনান জয়সুরিয়া ২৬ ও শানাকা ১৪ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে আল-আমিন ৩টি ও সাকিব ২টি উইকেট লাভ করেন। মুস্তাফিজ, মাশরাফি ও মাহমুদউল্লাহ নেন ১টি করে উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হন সাব্বির।
আজ পাকিস্তান-আমিরাত মুখোমুখি :
এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শক্তিশালী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। টুর্নামেন্টে দুদলই এখন পর্যন্ত জয়হীন রয়েছে। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা ও স্বাগতিক বাংলাদেশের সাথে হেরেছে আরব আমিরাত। অপরদিকে পাকিস্তানেরও যাত্রা শুরু হয়েছে হার দিয়ে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে ৫ উইকেটে হেরেছে আফ্রিদির দল।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে দুদলরই জয়ের বিকল্প নেই। আফগানিস্তান, ওমান ও হংকংকে হারিয়ে এশিয়া কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় আমিরাত। মূল পর্বে জয়ের দেখা না পেলেও বল হাতে বেশ চাপে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে। দুটি ম্যাচই তারা হেরেছে ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য। পাকিস্তানের অবস্থাও তা-ই। ভারতের সাথে ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে আফ্রিদিদের।