বাড্ডার যে বাসাটিতে জঙ্গিদের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের গোলাগুলি হয়েছে সেটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) হেডকোয়ার্টার এবং মোহাম্মদপুরের বাসাটি তাদের বোমা তৈরির কারখানা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মনিরুল ইসলাম শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে অভিযান শেষে বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
এর আগে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নবোদয় হাউজিংয়ের ২৮ নম্বর ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিটি’র সদস্যরা একসঙ্গে অভিযান চালান। এই বাসাটি থেকে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম দেখে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি (দক্ষিণ) ও সিটি টিম বাড্ডার সাতারকুল সড়কের জিএম বাড়ির ৫৭৭/১ নাম্বার বাসার নীচতলায় অভিযান চালায়। এসময় জঙ্গিরা ডিবি পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়, গুলি করে। এতে বাহার উদ্দিন ফারুকী নামে পুলিশের এক পরিদর্শক আহত হয়েছেন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই বাসাটি থেকে দুই জঙ্গি কামাল ওরফে জামাল ও হিরণকে আটক করা হয়েছে। এক জঙ্গি পালিয়ে গেছে।
পরে কামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের বাসাটিতে অভিযান চালানো হয়। কামাল পুলিশকে জানান, তিনি বাড্ডার ওই বাসায় থাকেন না। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের ২৮ নাম্বার বাসার পঞ্চম তলায় থাকেন। এরপর পুলিশ তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের এই বাসাটিতে অভিযানে আসে। তবে পুলিশ আসার আগেই এখানে থাকা জঙ্গিরা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা বাসাটির ভেতরে প্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জম দেখতে পায়। এরপর ডিবির বোম ডিস্পোজাল টিম ও বোমা বিশেষজ্ঞরা এসে বিস্ফোরকগুলো ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ‘বিস্ফোরকগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাতের অল্প আলোতে বিস্ফোরকগুলো ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। শনিবার এসব বিস্ফোরক দিনের আলোতে ধ্বংস করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাড্ডা থেকে আটক কামাল সহজে এই আস্তানার তথ্য দিতে চায়নি। সে অনেক পরে মুখ খুলেছে। তাই রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমরা মোহাম্মদপুরের এই আস্তানার সন্ধান পাই। আমরা ফ্ল্যাটটিকে সিলগালা করে দিয়েছি। শনিবার দিনের আলোতে এসব বিস্ফোরক ধ্বংস করা হবে।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনরুমের ফ্ল্যাটটির প্রতিটি রুমেই বিস্ফোরক ছিল। ওয়ালে ল্যাবের মত করে কম্পিটার কম্পোজ করা বিপদজনকসহ বিভিন্ন লেখা সাটানো রয়েছে। তারা এখানে বোমা তৈরি ও প্রশিক্ষণ নিতো।’
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে এটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বোমা তৈরির কারখানা। বাড্ডা থেকে আটক দুইজন নিজেদের যে নাম বলেছে, তাও তাদের সত্যিকার নাম কিনা আমাদের সন্দেহ রয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া যাবে।’
মোহাম্মদপুরে জঙ্গিদের ওই ফ্ল্যাটটির বিপীরতের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটটি থেকে ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভিওআইপি ব্যবসা করে আসছিল। তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের কোনও যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। তাই তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।
এই ঘটনায় দুটি বাড়ির বাড়িওয়ালাদেরও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বাসাটি থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে জঙ্গিদের চাপাতির কোপে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফারুকী আহত হন। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় পুলিশ সেখান থেকে দুই জঙ্গি কামাল ও হিরনকে আটক করে। রাত ১২টার দিকে বাড্ডায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুনিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে ধারালো অস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে।
দুটি অভিযানে মনিরুল ইসলাম নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম, দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান, দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রাজীব আল মাসুদ ও সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল আরাফাত। এছাড়াও বোম ডিস্পোজাল টিমের বিশেষজ্ঞ দল।