একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালের ঢাকার এই দিনটি ছিল প্রতিবাদী এক মিছিলের নগরী। কারণ বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা তার মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য, সরকারের দেয়া ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বের করেছিল প্রতিবাদী মিছিল। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির সেই সংগ্রামের পথটি সহজ ছিলনা। যার জন্য এদেশের মানুষের ঝড়েছে রক্ত, দিয়েছে প্রাণ! যার ফসল আজকের এই অমর একুশ যা আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে পালিত হয় গোটা পৃথিবী জুড়ে। তাই তো কবি আবুল ফজল বলেছেন – “একুশ মানে মাথা নত না করা”।
এই অগ্নি পথের যারা ছিলেন বীর সৈনক এবং যারা দিয়ে ছিলেন দুসাহসিক নেতৃত্ব। তাদের নাম স্বর্ন অক্ষরে লেখা রয়েছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। বাংলা মায়ের সেই অকুতভয় বীর যোদ্ধাগন নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষার জন্য আর সৃষ্টি করেছেন এই দুনিয়ার এক নতুন ইতিহাস। কালজয়ী সেই ইতিহাসের নির্মাতা, সেই সব মহা নায়কদের জীবন নিয়ে স্বল্প করে আজকের এই লেখা।
ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনঃ
ভাষা আন্দোলনে আবদুল মতিন এক উজ্জল নক্ষত্রের মত পথের দিশারী। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক। ২১ ফেব্রুয়ারী যে কজন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্তে অটল থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার জোড়াল অবস্থান ও যোগ্য নেতৃত্ব ঐ দিন আন্দোলনের এক নব জোয়ারের সৃষ্টি করে যার ঢেউ লাগে সারা বাংলা জুড়ে। আর ভিত্তি কাাঁপিয়ে তোলে পাকিস্তানী বরবর শাসকদের।
আবদুল মতিনের জম্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহলি উপজেলার ধুবলী গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আনোয়ারা খাতুন। তিনিই ছিলেন পরিবারের প্রথম সন্তান, তাই পরিবারের সবাই তাকে ডাকতেন গেদু বলে।
পিতার চাকরীর কারনে মতিনের শৈশব কৈশোর কাটে দার্জিলিং। সেখানেই তিনি ১৯৩২ একটি বাংলা মিডিয়াম মহারানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাথমিক স্তরে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৩৬ সালে প্রাথমিক স্তর শেষ করে দার্জিলিং গভমের্ন্ট হাই স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে ভর্ত্তি হয়। তিনি ১৯৪৩ সালে এনট্রেন্স ( মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা ) ৩য় বিভাগে উত্তির্ন হন। আর সেই বছর তিনি রাজশাহী গভমের্ন্ট কলেজে ইন্টার মেডিয়েটে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৪৫ সালে তিনি এইচ এস সি পাশ করেন। ঐ বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (বি এ) ভর্ত্তি হলেন এবং থাকার জন্য সিট পেলেন ফজলুল হক হলে। তিনি ১৯৪৭ সালে গ্রাজুয়েটস কোর্স শেষ করেন এবং মাস্টার্স করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ হতে।
ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইনিয়ন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পরে সংগঠনের সভাপতি হন। তারপর থেকে তিনি কমিউনিষ্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৫৪ সালে পাবনার জেলা কমিটির পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করলে আবদুল মতিন তাতে যোগদেন। ১৯৬৮ সালে পাবনা জেলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) এর ভিতর আলাউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে উপদল গড়ে তোলেন। পরে তিনি দেবেন শিকদার, আবুল বাশার, আলাউদ্দিন আহমেদ ও নরুল হক চৌধুরীর সহায়তায় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি গঠন করেন এবং ২০০৬ সালে সেখান থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়াকার্স পার্টি (পূর্ণ গঠিন) গঠিত হলে আবদুল মতিন সেখানে যোগদেন। তারপর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি (পূর্ণ গঠিত) ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট লীগ ঐক্য বদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ হলে আবদুল মতিন নবগঠিত এই লীগের সাথে ঐক্য বদ্ধ হন। তিনি পার্টিতে উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং মৃত্যূর আগে পর্যন্ত তিনি সেই পদে ছিলেন।
এই ভাষা সৈনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. অব লজ ডিগ্রি, বাংলা একাডেমীর ফেলোশীপ ও মাহাত্মা গান্ধি পির্স অ্যাওর্য়াড সহ অসংখ্য সম্মানা ও পুরষ্কার লাভ করেন।
আজীবন সংগ্রামী যোদ্ধা আবদুল মতিন ২০০১৪ সালের ৮ অক্টোবর সকালে ৯ টায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই সৈনিক মৃত্যূর পর তার চক্ষু ও দেহ মানবতার কল্যাণে দান করে যান। এভাবেই তার ৮০ বছরের সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
ভাষা সৈনিক গাজীউল হকঃ
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নির্ভীক সংগঠক ছিলেন গাজীউল হক। মহান এই বীর সৈনিক জীবনের শুরু থেকেই মওলানা ভাসানী সহ অনেক গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন। এই আলোর দিশারী ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পারার সময় শিক্ষক সুরেন বাবুর সান্নিধ্য পেয়ে হয়ে উঠেন রাজনীতি সচেতন। তারপর কলেজে গিয়ে সম্পর্ক গড়ে উঠে বিশিষ্ট ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লার সাথে পরে তারই হাত ধরে যোগদেন পূর্ব বাংলাার বাম রাজনীতিতে। এরপর বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্ত্তি পর যোগদেন ভাষা আন্দোলনে।
গাজীউল হক ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিশ্চিন্তা গ্রামে ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী এক মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহণ করে। তার পিতার নাম মওলানা সিরাজুল হক এবং মাতা নূরজাহান বেগম। গাজীউল হক এর পিতা ছিলেন কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোলনের একজন কর্মী।
মক্তোবে শিক্ষার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তার শিক্ষা জীবনের এবং পরে ভর্ত্তি হন কাশিমপুর স্কুলে। এই স্কুল থেকে তিনি উচ্চ প্রাইমারি বৃত্তি লাভ করেন। তারপর ১৯৪১ সালে তিনি বগুড়া জেলার স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্ত্তি হন এবং এই স্কুল থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন (এস এস সি) পাশ করেন। এরপর তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে আই এ ভর্ত্তি হন এখানেই তার সাথে পরিচয় ঘটে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর । এই কলেজ থেকেই ১৯৪৮ সালে আই এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে আনর্স ভত্তি হন এবং স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলে উঠেন।এই সময় থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৫১ সালে তিনি বি এ পাশ এবং ১৯৫২ সালে এম এ পাশ করেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। পরে ছাত্রদের প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে তার ডিগ্রি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। তারপর তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন শাস্ত্রে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৫৬ সালে তিনি এক সঙ্গে আইনের ১১টি পেপারে পরীক্ষা দেন।
রাজনীতির সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত হন কলেজ জীবন থেকেই। তিনি ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্র লীগ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে ধুবড়িতে অনুষ্ঠিত আসাম মুসলিম লীগ কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়ে মওলানা ভাসানীর ব্যাক্তিত্ব, বাগ্মীতা এবং নেতৃত্ব দেখে মুগ্ধ হন। তারপর ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব- পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুব লীগের ঈশ্বদী কনফারেন্সে উত্তর বঙ্গ শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলনের এই পুরোধা সংগঠক আবদুল মতিন সহ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে অবস্থান নেন। আর সাধারাণ ছাত্ররা তাদের সাথে একমত পোষণ করে এবং তাদের নেতৃত্বে সেই দিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নিজের মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষা করে।
ভাষা সৈনিক গাজীউল হক পেশা হিসেবে বেছে নেন আইন পেশাকেই। তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগ থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৭ সালে আইনজ্ঞ সৈয়দ নওয়াব আলীর অধীনে বগুড়া বারে যোগদানের মধ্যদিয়ে তার কর্ম জীবনের শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে মার্চ মাসে পূর্ব- পাকিস্তনের ঢাকা কোর্টের আইন ব্যবসার সনদ লাভ করেন এবং ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে যোগদেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তিনি একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তছাড়া তিনি কবিতা, গান ও প্রবন্ধ লিখতেন এবং তার লেখা অনেক বই রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ৪৪ তম সমার্বতনে ভাষা সৈনিক গাজীউল হককে সম্মান সূচক ড. অব লজ ডিগ্রি প্রদান করে। তাছাড়াও বাংলা একাডেমীর ফেলোশিপ সহ অসংখ্য সম্মানা পুরুষ্কার পান।
এই ভাষা সৈনিক ২০০৯ সালের ১৭ জুন বিকালে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে মৃত্যূ বরণ করেন।
কিংবদন্তী ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও গাজীউল হক ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে দুই অগ্রসেনা। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, থাকবে বাংলা ভাষা। ততদিন এই জাতি তাদের স্বরণ করবে শ্রোদ্ধার সঙ্গে। তাদের মৃত্যূ নেই তারা অমর। ইতিহাস তাদেরকে দিয়েছে মহা নায়কের ক্ষেতাব। ইতিহাসের এই পাতায় আরো বীর রয়েছেন যারা নিজের জীবন দিয়েছেনএই ভাষা আন্দোলনে। তাদের অবদান এই জাতি কোন দিনই শোধ করতে পারবো না । তারা হলেন ভাষা শহীদ- রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান। এখনে আমারা এই মানুষ গুলোর জীবনী তুলে ধরার চেষ্টা করবো ।
ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদঃ
ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ হলেন রফিক উদ্দিন আহমেদ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। ভাষা শহীদ রফিক ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার পারলি গ্রাম বর্তমানে রফিক নগর, ইনিয়ন- বলধারা, থানাÑ সিঙ্গাইরে জম্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আব্দুল লতিফ মিয়া এবং মাতা রফিজা খাতুন। রফিক ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড়। তিনি বাড়ী থেকে ৭মাইল দূরে বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টার মেডিয়েটে ভর্ত্তি হন। তাপর বাবার প্রিন্টিং ব্যবসা দেখা শুনা করার জন্য ঢাকায় চলে আসেন।
শহীদ রফিক একই গ্রামের মেয়ে রাহেলা খাতুন পানুকে ভালবাসতেন। তাদের এই ভালবাসাকে মেনে নেয় দুই পরিবার এবং ঠিক করেন বিয়ের দিন তারিখ। তাই রফিক বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য ঢাকায় আসেন এবং তার ২১ ফেব্রুয়ারী বিয়ের শাড়ী ,গহনা ও কসমেটিক নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ীতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এই মহান ব্যাক্তি যখন শুনলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের হবে তখন তিনি ছুটে যান সেখানে। তৎকালীন সরকার কর্তৃক জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার সাথে তিনিও যোগ দেন সেই মিছিলে। সারা ঢাকা শহর যখন মিছিলে মিছিলে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে। তখন সরকারের নির্দেশে পুলিশ ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন শুরু করে এবং সেই গুলি থেকে একটি গুলি এসে রফিকের মাথায় বিদ্ধ হয়ে মাথা ঝাঝরা হয়ে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যূবরণ করেন এই ভাষা শহীদ।
সেখানেই ক্ষান্ত হয়নি পাকিস্তানী হায়েনারা পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তার লাশ সরিয়ে ফেলে। আর জনরোষের ভয়ে পরদিন সেনাদের সহযোগীতায় আজিমপুর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করে। কিন্তু তার কবরের কোন চিহ্ন রাখা হয়নি। ফলে আজিমপুর কবরস্থানে হাজারো কবরের মাঝে ভাষা শহীদ রফিকের কবরটি অজানাই থেকে গেল।
বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ভাষা শহীদ রফিককে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেন। তাছাড়াও সরকারি ভাবে ২০০৬ সালে তাঁর ‘পারলি’ গ্রামে তার নামে একটি পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর স্থ্পন করা হয় এবং সেখানে তার ব্যবহৃত প্রচুর বই আছে।
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারঃ
ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার ২৬ আশ্বিন ১৩২৬ বঙ্গাব্দ, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ ময়মনসিংহ জেলার গফর গাঁয়ের পাঁচাইর গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসান আলী এবং মায়ের নাম সাফাতুন নেছা। তার অন্য ভাইদের নাম আবদুল কাদের ও এ.এইচ.এম আসাদ (নয়ন)। তিনি স্থানীয় ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু কাল পড়াশুনা করেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার সাথে কৃষি কাজে মন দেন। তার এক বছর পর হঠাৎ করেই পরিবারের কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেন। পরিবারের লোক জন তাকে অনেক খোঁজ করেও তার সন্ধান লাভ করতে পারেনি। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জে জাহাজ ঘাটে আসে এবং সেখানেই এক ইংরেজের সাথে তার পরিচয় ঘটে। সেই ইংরেজ তাকে কাজ দিয়ে বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) পাঠান সেখানে তিনি প্রায় দশ বছর চাকরি করেন।
বার্মা থেকে দেশে ফিরে আবদুল জব্বার আমেনা খাতুন নামের এক যুবতীকে বিয়ে করেন। কিছু দিন পরে তাদের দুজনের ঘর আলো করে এক পুত্র সন্তানের জম্ম হয় এবং তার নাম রাখেন নূরুল ইসলাম।
এর কিছুদিন পর আবদুল জব্বারের শাশুড়ীর ক্যান্সার রোগ ধরা পরলে তিনি ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী তার অসুস্থ শাশুড়ীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্ত্তি করেন। হাসপাতালে ভর্ত্তির পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রদের আবাস্থল গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারী আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে। কৌতুহলী আবদুল জব্বার কি হয়েছে তা দেখার জন্য রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করলে জব্বার সেখানে আহত হন। ছাত্ররা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ভাষা শহীদকে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।
ভাষা শহীদ আবুল বরকতঃ
ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৬ জুন, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক একটি ছোট গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শামসুজ্জোহা। বরকত পার্শ্বাবর্তী গ্রাম তালিবপুর ইংলিশ হাই্ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন এবং বহরাম পুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন। এরপর ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব বাংলা চলে আসেন। এখানে এসে বরকত পুরান ঢাকার পল্টনে বিষ্ণু প্রিয়া ভবনে তার মামার বাড়িতে থাকেন এবং সেই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্ত্তি হন। বরকত ১৯৫১ সালে তিনি অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং এম.এ শেষ বর্ষে ভর্ত্তি হন। তখন চলছিল ভাষা আন্দোনের সবচেয়ে উত্তাল সময় য়ার ঢেউ নাড়া দেয় বরকতকেও। তিনি যুক্ত হন ভাষা আন্দোলনের সাথে করেন মিছিল, মিটিং ও লিফলেটিং।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল রেব করলে চলে পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষ। বেজে ওঠে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের মৃত্যূ ডংকা। আর ঢাকার আকাশ বাতাস পুত্র হারা বাংলা মায়ের চোখের জল আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে। ঐ দিন বিকাল ৩টায় পুলিশ মেডিকেল কলেজের হোস্টেল চত্তরে ঢুকে নির্মম ভাবে গুলি শুরু করে। সেই সময় আবুল এক বন্ধুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং হঠাৎ করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রথমে কেউ বুঝতে পারেনি, ততক্ষণে বরকতের রক্তধারা দিয়ে বাংলার মাটি ভিজে লাল হয়ে উঠেছে। গুলিটি লেগেছিল তল পেটে এবং পরনের নীল হাফ শার্ট, খাকি প্যান্ট ও কাবুলী স্যান্ডেল রক্তে ভিজেই চলছে। দু’তিন জন ছুটে এসে তাকে কাঁধে করে নিয়ে জরুরী বিভাগের দিকে দৌড়াতে থাকে। বরকত তখন বলছিল- আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা, কৃষ্ণ প্রিয়া ভবন পুরান পল্টনে খবর পৌঁছে দিবেন। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ পণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। শুধু মাত্র অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে ঐ দিন রাত ৮ টায় ভাষা আন্দোলনের এই বীর সৈনিক মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরেন।
পুলিশ জনরোষের ভয়ে তার লাশ গুম করে দিতে চেয়েছিল। অবুল বরকতের মামা আব্দুল মালেক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ্যাসিস্ট্যান্ট একাউন্ড অফিসার এবং আর এক নিকট আত্বীয় এস এম জি বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন তার নাম ছিল আবুল কাসেম। তারা দুজনে তদবীর করে পুলিশের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। তারপর রাত ১০ টায় পুলিশের কড়া পাহাড়ায় তার লাশ আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মহান বীর, এই ভাষা শহীদকে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।
ভাষা শহীদ আবদুস সালামঃ
ভাষা শহীদ আবদুস সালামের জম্ম ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষাপুর গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর এক মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া এবং মাতার নাম দৌলতুন্নেসা। সালাম ৪ ভাই ও ৩ বোনের তিনিই ছিলেন বড়। তিনি দাগন ভূঁইয়া করিম উল্ল্যাহপুর হাই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ করে কামাল আতাতুর্ক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্ত্তি হয়। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটনের কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে চাচাতো ভাই আবদুল হালিমের সাহায়তায় ঢাকা আসেন এবং ৮৫ নং দিলকুশা, পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়নের কাজ পান। আর ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬ বি নং কোয়ার্টারে বাস করতে থাকেন।
এই ভাষা শহীদ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষার দাবীতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে যে মিছিল বের হয় সেই মিছিলে তিনিও অংশ গ্রহণ করেন। পরে ছাত্র জনতার উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে আবদুস সালম সেখানেই গুলি বিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সালামের ম্যাচের কাজের বুয়ার ছেলে সালামের ভাতিজা মকবুল আহম্মদ ধনা মিয়াকে খবর দেন। যিনি তেজগাঁও নাবিস্কতে চাকরী করতেন। সঙ্গে সঙ্গে মকবুল ছুটে যান তার আর এক জেঠাতো ভাই হাবিব উল্ল্যার কাছে। তারা দুজনে মিলে দুপর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসে দেখতে পান চাচা আবদুস সালাম পেটে গুবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মেডিকেলের বারান্দায় পড়ে আছেন।
তারা ঐ দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে তার বাবা ফাজিল মিয়াকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে সালামের গুলি লাগার খবর পাঠায়। টেলিগ্রাম পাওয়া মাত্রই ফাজিল মিয়া তার অন্য পুত্র সহ ঢাকা মেডিকেলে চলে আসে। সালামের চিকিৎসায় অবহেলা করার কারনে ছাত্ররা মেডিকেলে বিক্ষোপ প্রর্দশন করে। এরপর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ ফেব্রুয়ারী বেলা ১১ টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু সরকার তাকে একুশে পদক দেওয়ার সময় গেজেটে ৭ এপ্রিল উল্লেখ করে। ফলে তার মৃত্যূর তারিখ নিয়ে বিভ্রন্তের সৃষ্টি হয়। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪ টায় তার বাবার উপস্থিতিতে শত শত ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে আজিমপুর কবরস্থানে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
ভাষা শহীদ আবদুস সালামের কোন ছবি ছিলনা । কিন্তু পরবর্তীতে রাসার উদ্যোগে বিকাশের মাধ্যেমে শিল্পী সাহাজাহান আহমেদ তার ছবিটি আঁকেন। ১৯৯৯ সাল ২০ ফেব্রুয়ারী শহীদ সালামের ভাই- বোনের বর্নণা অনুসারে শিল্পীরা ছবিটি আঁকতে থাকে। ছবি আঁকা শেষ হলে শহীদের ভাই- বোনেরা শিল্পী সাহাজাহান আহমেদ এর ছবিটিকে তাদের ভাই আবদুস সালম বলে চিহ্নিত করেন। বর্তমানে সেই ছবিটি জাতীয় যাদুঘরে একুশের গ্যালারীতে রয়েছে।
বাংলা মায়ের এই বীর শহীদ আবদুস সালামকে ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন।
ভাষা শহীদ শফিউর রহমানঃ
ভাষা শহীদ শফিউর রহমানের জম্ম ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগণার হুগলীর কোননগরে। তার পিতার নাম মৌলবী মাহবুবুর রহমান। শফিউর কোলকাতার গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আই কম পাশ করেন। ১৯৪৫ সালে ২৮ মে কোলকাতার তমিজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে আকিলা খাতুনকে বিয়ে করেন। তারপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় শফিউলের পিতা সব সহ ঢাকায় চলে আসেন। এসেই পাকিস্তানের পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসে সুপাররিনটেনডেন্ট পদে চাকরী পান। আর শফিউর পুনরায় বি এ ভর্ত্তি হন এবং ঢাকা হাইকোর্টে হিসাব রক্ষক শাখায় চাকরী নেন।
প্রতিদিনের মত শফিউর রহমান ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সোইকেলে করে সকালে অফিসে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাথখোলা, নবাবপুর রোডে ২১ ফেব্রুয়ারীতে নিহত ভাষা শহীদের স্বরণে জনসমাবেশ, গণমিছিল ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। ঐ সমাবেশে শফিউর রহমানো উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সেই সমাবেশে এলোপাতারি ভাবে গুলি চালাতে থাকে। সেই দিন অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখানেই রাশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে অবস্থানরত সময়ে একটি বুলেট এসে শফিউর রহমান আহত হন। ওখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারনে তার অস্ত্র পাচার সফল হয়নি। ফলে ঐ দিন সন্ধ্যা ৭ টায় তিনি মৃত্যূ বরণ করেন। সেই দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেডিকেল থেকে অনেক লাশ নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলে। কিন্তু সাহিত্যিক হাবিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুবুর রহমান (মির্টফোর্ডের ছাত্র) এবং আরো কয়েকজন মিলে শফিউলের লাশ স্টেরিলাইজ ডিপার্টম্যান্টে লুকিয়ে রেখেছিল। শফিউলের মরদেহ ৩ দিন সেখানেই রাখা হয়। পরে হাইকোর্টের গ্রন্থাগারের গ্রন্থকারিক কামাল উদ্দিন ঢাকার তৎকালীন এস.ডি.ও এর নিকট অনুমতি নিয়ে মেডিকেল থেকে তার লাশ বের করেন। তারপর ২৪ ফেব্রয়ারী রাত ১২ টায় আজিমপুর কবরস্থানে শফিউর রহমানের লাশ দাফন করা হয়। এবং তার পরনের গেঞ্জি ও পাজামা রক্তে এত ভিজে গিয়েছিল যে, সেগুলি কবরস্থানেই পুতে রাখা হয়।
ভাষা শহীদ শফিউরের স্ত্রীর জমানো ১০০ টাকা দিয়ে কবরের জায়গা কেনা হয়েছিল। আর শফিউর রহমানের রক্তে মাখা শার্ট, কোর্ট, জুতা সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এসব জাতীয় যাদুঘরে রয়েছে। ভাষা আন্দোলনে তার মহান আতেœা ত্যাগের কারণে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে এই শহীদকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।
শুধু এরাই নন আরো অনেকেই শহীদ হয়ে ছিলেন এই আন্দোলনে যাদের নাম পরিচয় এমনকি তাদের লাশো খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ জনরোষের ভয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অনেক লাশ গুম করে ফেলে। এই সকলই বীর যোদ্ধা আজ যাদের কারণে আমার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, পারি গর্ব করতে! তারা নিজেদের দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করেছে শুধু তাই না বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছে তার মর্যাদা। তাই আজ জাতি হিসেবে গর্ব করে বলতে পারি। আমারা সেই পুর্ব পুরুষের উত্তরসূরী যারা আজীবন সংগ্রাম করেছে মুক্তির জন্য, নিজ ভাষার জন্য। কখনো পরাধীনতা মেনে নেয়নি। আর ইতিহাস তাদেরকে দিয়েছে অমরত্ব। তাদের কখনো মৃত্যূ হয় না তারা বেঁচে থাকেন তাদের কর্মের মধ্যে দিয়ে। তাই আজ সারা দেশ এবং বিশ্ব এই বীর সৈনিকদের স্বরণ করে শ্রদ্ধার সঙ্গে।