বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন দলটির নিখোঁজ, প্রয়াত ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। গত ১৯ মার্চ ২০১৬ শেষ হল বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল ও সম্মেলন। সম্মেলনে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হলেও মহাসচিব,ও স্থায়ী কমিটি সহ পুরো কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের দায়ীত্ব পেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘোষিত হতে পারে কেন্দ্রীয় বিএনপির পূর্ণাংগ কমিটি।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা শিক্ষাজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য ছিলেন। নতুন কমিটি হলে সহ–সভাপতি হিসেবে তাকে রাখা হতে পারে।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগীয়) ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘আমার মনে হয়, ম্যাডাম খালেদা জিয়া তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখবেন। এ কারণে সিলেট বিএনপির সদস্য হিসেবেই হয়তো কমিটিতে তার নাম থাকবে।’
জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে লুনার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার ছেলে অর্ণবের সেল ফোনটিও বন্ধ ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হলেই সানন্দে অংশ নেন তিনি। বর্তমানে কোনও দায়িত্বে না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে আসন্ন কাউন্সিলে ঢাকা মহানগরের সম্ভাব্য দক্ষিণের বড় কোনও দায়িত্বে আসতে পারেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণাকালে আলোচনায় আসেন আফরোজা।
আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি তো রাজনীতিতেই আছি। দায়িত্ব পাব কি না তা জানি না। ম্যাডাম ডাকলে যাই, না ডাকলেও যাই। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের আগেও আমি আব্বাসের নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলাম। কিন্তু তখন এতটা আলোচনা ছিল না।’
কারাগারে মৃত্যুবরণ করা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা। লালবাগ এলাকায় কমিশনার পদে নির্বাচন করেছেন এই নারী। কাউন্সিলে ঢাকা মহানগরের কোনও দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি। তবে তার ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রদল নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপা কেন্দ্রীয় কমিটিতেও জায়গা পাচ্ছেন। তার আগ্রহ আছে বলেই শুনেছি।’
জানতে চেয়ে লালবাগের বাসায় খোঁজ করা হলে কল্পনা আখতারকে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ হওয়ার পর সন্ধান মিলেছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে দলীয়ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখার ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হলেও ব্যক্তিগতভাবে তার রাজনীতিতে আগ্রহ নেই।
হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘পলিটিক্স করার ইচ্ছা নাই। সংসার সামলাতে গিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করছি।’
বিএনপির প্রয়াত নেতা ওবায়েদুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ। বর্তমানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা এই নারী আসন্ন কাউন্সিলে দলের সম্পাদকীয় পোস্টে জায়গা পাচ্ছেন বলে বিএনপির একাধক দায়িত্বশীল নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করি দেশের জন্য, পদের জন্য নয়। জিয়ার আদর্শের বাংলাদেশ গঠনে আমিও একজন কর্মী। দল চাইলে, ম্যাডাম চাইলে পদ–পদবি হবে। না হলে সমস্যা নেই। কাজ করে যাবো।’
গত বছরের ২০ জানুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছিলেন নুরুজ্জামান জনি। খিলগাঁও ছাত্রদলের এ সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী মুনিয়া পারভীন মুণীষা। বর্তমানে প্রাইভেট একটি ব্যাংকে চাকরি করছেন তিনি। তাকে মহানগর বিএনপির কোনও দায়িত্বশীল পদে দেখা যেতে পারে। এ নিয়ে তার কোনও মন্তব্য জানা যায়নি।
এছাড়া নিখোঁজ বিএনপির মহানগর নেতা চৌধুরী আলম কমিশনারের স্ত্রী, বিদেশে পলাতক কাইয়ুম কমিশনারসহ আরও অনেকের স্ত্রী–পুত্ররা বিএনপির কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস–চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘যারা বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, গুম হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে এলে তো স্বাগতম। তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়ার বিষয়টি তাদের ওপরেই নির্ভর করছে। তাদের আগ্রহ থাকলে হাইকমান্ড স্বাগত জানাবে।’