২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর- পিলখানায় যে বিদ্রোহ ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডে ঘটেছিলো; সেই ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি।
সাত বছর আগে ঠিক এই দিনে বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানেরা নারকীয় তান্ডব চালায় পিলখানায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।
রক্তাক্ত ঐ বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিডিআরের নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাহিনীর পোশাকও বদল করা হয়।
বিডিআর বিদ্রোহের পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লোকের সাজা হয় অধিনায়কদের সামারি ট্রায়ালে। এতে মোট ১১ হাজার ২৬৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ হাজার ৯৭৩ জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকিরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগদান করেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষ আদালত গঠন করে ৬ হাজার ৪৬ জন জওয়ানকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এসব মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। তাঁদের প্রত্যেককে চাকরিচ্যুত করা হয়। আর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত ১১৫ জন চাকরি ফিরে পান। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল খুনের মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান।
ফাঁসির আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন ১৪ জন। ফৌজদারি আদালতে দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছে।
তবে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এই বিদ্রোহের বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট হয়নি।
মামলার রায় হয়ে গেলেও ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল বলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, পুনরায় পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের প্রয়োজন আছে। আদালতের পর্যবেক্ষণেও বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংসদে বলেছিলেন ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
তবে যত প্রশ্নই থাকুক বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে অনুযায়ী এখন কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশবাসী।