সৈকতনগরী কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে আরো ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনের পর্যটনবিষয়ক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান। ওই তিনদিন অনুষ্ঠিত হবে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘পাটা নিউ টুরিজম ফ্রন্টিয়ার্স ফোরাম ২০১৬’। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এতে দুই শতাধিক পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিদেশি অতিথি অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) ব্যবস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় থাকছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে চলবে দ্বিতীয় ‘মেগা বিচ কার্নিভাল’।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে আন্তর্জাতিকমানের ওই আয়োজন সফল করতে ২৫ জুলাই কক্সবাজার ঘুরে গেলেন প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল। তাঁরা ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকা পরিদর্শন করেন। গতকাল বুধবার সাগরপাড়ের তারকা হোটেলগুলো ঘুরে দেখে কক্সবাজার ত্যাগ করেন তাঁরা। পর্যটন বিষয়ক সংস্থাটির সদর দপ্তর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে।
এদিকে প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রস্তুতি সভা। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ারুল নাসেরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো কক্সবাজারের পরিচিতি তুলনামূলক কম। এখানে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের অবস্থান সম্পর্কেও জানেন না অনেকে। তাই কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে যথাযথভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।’
ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) সদস্য বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ এমনিতেই আন্তর্জাতিক ওই ইভেন্টের অংশীদার।
মঙ্গলবারের প্রস্তুতি সভায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককস্থ প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তরের পরিচালক মাম পুনাংথিপ সোতিপানামুম, সহকারী পরিচালক সুতারাত সারোট্রান ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক পল প্রাইয়াংকারা তাঁদের অভিমত তুলে ধরেন।
সভায় কক্সবাজারের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, পর্যটনসংশ্লিষ্টরাসহ সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা এবং সংবাদকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সরকার ইতোমধ্যে ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ ঘোষণা করেছে। এর শুরুতে কক্সবাজার সৈকতে প্রথমবারের মতো গত ৩১ ডিসেম্বর শুরু হয় তিন দিনব্যাপী ‘বিচ কার্নিভাল’। জমজমাট ওই অনুষ্ঠান শেষ হয় ২ জানুয়ারি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
সৈকতের বালুচরে তিন দিনের এই উৎসবে ছিল খেলাধুলা, সার্ফিং, ঘুড়ি উৎসব, সাইক্লিং, কাবাডি, মোরগ লড়াই, ফানুস উড়ানো, লায়ন ড্যান্স, বান্দরবান কালচারাল একাডেমির পারফরমেন্স ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পর্যটকরা সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত বিস্তৃত বালুচরে মাতিয়ে রাখেন তাঁদের সরব উপস্থিতিতে।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ‘বিচ কার্নিভাল’।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সৈকতে এখন থেকে প্রতিবছর একই সময়ে ‘বিচ কার্নিভাল’ আয়োজন করা হবে।
সুত্র-কালেরকন্ঠ