সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে একটি অফিস পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাংকা ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রভাবশালী নারীদের একজন হিসেবে জায়গা করে নিলেন এই ফার্স্ট ডটার। তবে ইভাংকার এই পদটি সম্মানসূচক। অবশ্য শুধু ট্রাম্প কন্যাই নয়, বিশ্বের আরো অনেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টদের মেয়েরাই বর্তমানে তাদের বাবার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। এমনই কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো এখানে:
পাকিস্তান
পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মারিয়াম নওয়াজ শরিফ। ৪৩ বছর বয়সী এই নারী মূলত তাদের পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করলেও বাবার রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। ২০১৩ সালে নওয়াজ শরিফের জন্য নির্বাচনী সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মারিয়াম। বর্তমানে পাকিস্তানের ডানপন্থি দল ‘পাকিস্তান মুসলিম লীগ’র (এন) হয়ে কাজ করছেন দেশটির এই ফার্স্ট ডটার।
বিবিসি উর্দুর আসিফ ফারুকি বলেন, ‘তিনি সব সময়ই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।’ বেশ কয়েকবার মারিয়ামের সাক্ষাৎকার নেয়া এই সাংবাদিক আরো বলেন, ‘(ভবিষ্যতে) বাবার রাজনৈতিক উত্তরসূরী না হলেও তিনি স্পষ্টই একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।’
তবে গত বছর পানাম পেপার্সে নাম আসে মারিয়ামের। এতে দেখা যায়, তার এবং তার দুই ভাইয়ের ওই অফশোর কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লন্ডনে বিলাসবহুল সম্পদ ক্রয় করা হয়েছে। এসব অভিযোগ অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন তার বাবা নওয়াজ শরিফ। তার এবং পরিবারের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে টার্গেট করেই কিছু লোক এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাশিয়া
নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বেলায় প্রচণ্ড রকমের রক্ষণশীল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত খুব অল্প লোকই জানতো যে তার দুটি মেয়ে আছে।
বিবিসি রাশিয়ার ফামিল ইসমাইলভ বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতি আগ্রহীদের সন্দেহের চোখে দেখে রুশ প্রশাসন। যেকোনো বিষয় যতদূর সম্ভব সাংবাদিকদেরই নিশ্চিত হতে হয়। এ ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কখনোই কিছু নিশ্চিত করা হয় না।’
২০১৫ সালে একবার আলোচনায় এসেছিলেন পুতিনের ছোট মেয়ে ইয়েকাতেরিনা। তখন জানা যায়, কাতেরিনা তিখনোভা নাম ব্যবহার করে মস্কোতেই বসবাস করেন রুশ প্রেসিডেন্টের এই মেয়ে। তখনই বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে রাশিয়ার নাগরিকরা জানতে পারে, ইয়েকাতেরিনার স্বামী কিরিল শ্যামালভ নামের এক ব্যবসায়ী। পুতিনের ছোটবেলার এক বন্ধুর ছেলে তিনি। বিভিন্ন গ্যাস ও প্যাট্রোকেমিক্যাল শিল্পে এই দম্পতির বিনিয়োগ আছে ২ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে ৩০ বছর বয়সী ইয়েকাতেরিনা মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ‘ইন্টালেকচুয়াল ফান্ড’ নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করেন। রক অ্যান্ড রোলসের একজন নামকরা অ্যাক্রোবেটিক পুতিনের এই মেয়ে। ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডে অ্যাক্রোবেটিকের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেন তিনি।
তুরস্ক
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ‘পছন্দের কন্যা’ হিসেবেই পরিচিত তার ছোট মেয়ে সুমেইয়ে এরদোয়ান। বিবিসি তুর্কির ইরেম ককার বলেন, ‘তার বাবা তাকে ‘আমার ছোট্ট হরিণ’ নামে ডাকেন। তুরস্কে এই শব্দটি সুন্দর ও পছন্দের কাউকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।’
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বাবার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কূটনৈতিক সফরেও বাবার সঙ্গে অংশ নেন তিনি। সুমেইয়ে এরদোয়ানের দল একে পার্টির হয়ে একটি সংসদীয় আসনে লড়বেন- এমন খবরও বেরিয়েছিল ২০১৫ সালে অবশ্য তিনি তা করেননি। তুরস্কের নারী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি।
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট হোসে ইদুয়ার্দো দোস সান্তোসের বড় মেয়ে ইসাবেল দোস সান্তোস দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সোনাগলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হোসে। ২০১৩ সালে তার মেয়ে ইসাবেলকে আফ্রিকার সবচে ধনী নারীর খেতাব দেয় ফোর্বস ম্যাগাজিন। প্রথম নারী ধনকুবেরও ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের মালিক অ্যাঙ্গোলার এই ফার্স্ট ডটার।
দেশের অর্থবাজার, টেলিকমিউনিকেশন এবং হীরক শিল্পেও বিরাট বিনিয়োগ আছে ব্রিটেনে পড়াশোনা করা ইসাবেলের। অ্যাঙ্গোলার সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক পর্তুগালের বিদ্যুৎ, তেল এবং বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রেও বিনিয়োগ আছে তার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্বের সবচে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি অ্যাঙ্গোলা। সম্পদের কারণে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন ইসাবেল। তবে ২০১৫ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার এই সফলতা রাতারাতি আসেনি। এসব করতে আমার দুই দশক সময় লেগেছে।’
তাজিকিস্তান
মধ্য-এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের দীর্ঘকালীন প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমনের মেয়ে ওজোদা রাহমন। বাবার প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে ৩৯ বছর বয়সী এই নারীর। ২০০৯ সালে দেশের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত কূটনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেছে আইনে ডিগ্রিধারী ওজোদা। ২০১৬ সালে তাকে প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের প্রধান বানান বাবা ইমোমালি। ওই বছরই নির্বাচনে জিতে সিনেট সদস্য হন তিনি।
ওজোদার স্বামী জামোলিদ্দিন নুরালিয়েভ তাজিকিস্তানের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ডেপুটি চেয়ারম্যান। তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। ওজোদার ছোট বোনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এই পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেশটির বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সরকারের বিভিন্ন পদে আসীন।
কিউবা
কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর মেয়ে ম্যারিয়েলা কাস্ত্রো একই সঙ্গে দেশটির বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর ভাতিজি। তার সম্পর্কে বিবিসি কিউবার লিলিয়েত হেরেদেরো বলেন, ‘নারী অধিকার বিষয়ে তার মা ভিলমা ইসপিনকে একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই দেখা হতো। এখন মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে তার মেয়ে।’
১৯৬২ সালে জন্ম নেয়া কিউবার এই ফার্স্ট ডটার দেশটির পার্লামেন্টের একজন সদস্য এবং লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী প্রচারণার কারণে পরিচিত মুখ। কিউবার ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেক্স এডুকেশন’র প্রধান তিনি। কিউবার রাজধানী হাভানায় সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি এইডস থেকে শুরু করে সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করে।
হেরেদেরো বলেন, ‘তবে তিনি বিতর্কিতও। অনেকেই মনে করেন, শুধু প্রেসিডেন্টের মেয়ে হওয়ার কারণেই তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
সূত্র: বিবিসি