গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ১৬টি জেলা নিয়ে তিন দিনের প্রথম পর্ব শুরু হবে ৮ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে তা শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। আকি ১৬টি জেলা নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি যা শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বিরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
এদিকে, বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে টঙ্গীর তুরাগ তীরে চলেছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। ময়দানের আশ-পাশের এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে কাজ করতে আসছে স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর জায়গার ওপর চট ও বাঁশ দিয়ে ছাউনি তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠের সংস্কার কাজ করতে দেখা গেছে। মুসল্লিদের থাকার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ছাউনি। এর জন্য পুরোমাঠেই বাঁশের খুঁটি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে মাটি সমানের কাজের সাহায্য করছেন মুসল্লিরা। বিদেশি মেহমানদের থাকার জন্য লোহার খুঁটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আলাদা কামরা। ময়দানে মূল বয়ানের মঞ্চ তৈরির কাজও চলতে দেখা গেছে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের চারপাশে কাঁচা-পাকা টয়লেটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ময়দানের চার পাশেই রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ দুই-তিনতলা টয়লেট। শনিবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে একসঙ্গে ৫০ জন বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ডিসেম্বর) দুপুর থেকে শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ময়দান সংস্কারের কাজ করেন তারা। এই দলের মধ্যে থাকা রাহিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই এখানে কাজ করতে আসি। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের থাকার সুবিধার্থে ছাউনি তৈরির কাজ করেছি। বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে আশা করছি শুরুর আগেই শেষ হবে।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন-আর রশীদ বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মাঠের সব প্রবেশ পথে ও কৌশলগত স্থানে ইলেক্ট্রনিক তল্লাশি (আর্চওয়ে) ব্যবস্থা, ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদক্ষেপ।
পুলিশ সুপার বলেন, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুম এবং আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিমও থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা দু’একদিনের মধ্যে মিটিং করব।
এছাড়া, মুসল্লিদের সার্বিক সেবার ব্যবস্থা সম্পর্কে হারুন-আর রশীদ বলেন, আগত মুসল্লিদের সেবার জন্য ওয়াসা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অন্য বিষয়ে ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগ নদীর পারে ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইজতেমা এলাকায় অস্থায়ী দোকানপাট, স্থাপনা, বস্তি এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইজতেমা স্থল ও আশেপাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রি মনিটর, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও পঁচা-বাসি খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া, ইজতেমা চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অশ্লীল পোস্টার, অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন এবং আপত্তিকর ব্যানার অপসারণ করা হবে।
ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি সম্পর্কে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আশপাশের এলাকা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছে। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মুসল্লিদের জন্য ময়দানে পানির সুবিধা, বিদ্যুতের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং বিদেশি মেহমানদের থাকা ও নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এবারে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম ধাপে ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবে। সে সব জেলা ও খিত্তা হলো—শেরপুর ৬নং খিত্তায়, নারায়নগঞ্জ ৮ ও ১১নং খিত্তায়, নীলফামারী ৯নং খিত্তায়, সিরাজগঞ্জ ১০নং খিত্তায়, নাটোর ১২নং খিত্তায়, গাইবান্ধা ১৩নং খিত্তায়, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫নং খিত্তায়, সিলেট ১৬ ও ১৭নং খিত্তায়, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯নং খিত্তায়, নড়াইল ২০নং খিত্তায়, মাদারীপুর ২১নং খিত্তায়, ভোলা ২২ ও ২৩নং খিত্তায়, মাগুড়া ২৪নং খিত্তায়, পটুয়াখালী ২৫নং খিত্তায়, ঝালকাঠি ২৬নং খিত্তায় এবং পঞ্চগড় ২৭নং খিত্তায়।
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবে ১৬ টি জেলার মুসল্লিরা। ওইসব জেলা ও খিত্তা হলো—ঢাকা ১ থেকে ৭নং খিত্তায়, ঝিনাইদহ ৮নং খিত্তায়, জামালপুর ৯ ও ১১নং খিত্তায়, ফরিদপুর ১০নং খিত্তায়, নেত্রকোণা ১২ ও ১৩নং খিত্তায়, নরসিংদী ১৪ ও ১৫নং খিত্তায়, কুমিল্লা ১৬ ও ১৮নং খিত্তায়, কুড়িগ্রাম ১৭নং খিত্তায়, রাজশাহী ১৯ ও ২০নং খিত্তায়, ফেনী ২১নং খিত্তায়, ঠাকুরগাঁও ২২নং খিত্তায়, সুনামগঞ্জ ২৩নং খিত্তায়, বগুড়া ২৪ ও ২৫নং খিত্তায়, খুলনা ২৬ ও ২৭নং খিত্তায়, চুয়াডাঙ্গা ২৮নং খিত্তায় এবং পিরোজপুর ২৯নং খিত্তায়।