বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ : মেয়েদের বিশ্বকাপও ওয়েস্ট ইন্ডিজের
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৬
৩৪৯
বার পড়া হয়েছে
৬ বলে চাই ১৯ রান। ছক্কা, ছক্কা, ছক্কা ও ছক্কা। প্রথম ৪ বলেই ম্যাচের ইতি! রূপকথা যেন বাস্তব হয়ে ফুটে উঠল কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটে। ইডেনে ইতিহাস গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষের তা-বে নায়ক ব্র্যাথওয়েট। তবে সেই মঞ্চটা গড়ে দেওয়ার নায়ক আরেকজন। যার হাত ধরে ফিরে এল ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল, সেদিনের প্রেমাদাসা ফিরে এলো এদিনের ইডেনে। সেবার ফাইনালে ৭৮ রানের দারুণ ইনিংসে দলকে এনে দিয়েছিলেন শিরোপা। আবারও অসাধারণ এক ইনিংসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ভাগ্য গড়ে দিলেন মারলন স্যামুয়েলস।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে পার্থক্য গড়ে দিল স্যামুয়েলসের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস আর ব্র্যাথওয়েটের অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৫ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ব্র্যাথওয়েটের টানা চার ছক্কায় ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় ২ বল আগে। একাধিকবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পূর্বসূরিদের সেই কীর্তি স্পর্শ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই দল। ছোট সংস্করণের বিশ্বকাপেও দুবার শিরোপা জয়ী প্রথম দল তারাই। দুটি বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে একটা জায়গায় ক্লাইভ লয়েডের পাশে বসলেন ড্যারেন স্যামি। নতুন বলে স্যামুয়ের বদ্রি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটিং। তবে জো রুটের ব্যাটে লড়াইয়ে ফিরে ইংল্যান্ড। ব্র্যাথওয়েট-ব্রাভোদের উইকেট শিকার আবার থমকে দেয় ইনিংস। তবে শেষ দিকে লোয়ার অর্ডারদের ব্যাটে ইংল্যান্ড পেল লড়ার মত রান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ্বকাপে আগের ৫ ম্যাচের মতো ফাইনালেও টসে জিতে ড্যারেন স্যামি বেছে নেন পছন্দের রান তাড়া। টানা ১০ টি-টোয়েন্টিতে তিনি জিতলেন টস!
টুর্নামেন্টে আগের সব ম্যচের মতো এদিনও নতুন বল হাতে বদ্রি শুরুতেই ইংল্যান্ডকে দেন বড় ধাক্কা। ইংলিশদের সেমি-ফাইনালের নায়ক জেসন রয় ফাইনালে দেখছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ম্যাচের প্রথম বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন জোড়ালো এলবিডব্লিউ আবেদন থেকে। তবে পরের বলেই বদ্রির দারুণ এক স্লাইডারে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড। পরের ওভারে আবারও দৃশ্যপটে বদ্রি। আন্দ্রে রাসেলের লেগ স্টাম্পে থাকা বাজে বলে টাইমিং দারুণ করেছিলেন অ্যালেক্স হেলস। কিন্তু শট ফাইন লেগে বদ্রিকে ফাঁকি দিতে পারেননি। জায়গায় দাঁড়িয়েই রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন বদ্রি। তৃতীয় উইকেটেও যথারীতি ছিলেন বদ্রি। এবার দারুণ এক গুগলিতে বিভ্রান্ত ইংলিশ অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান। ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন নড়বড়ে ইংল্যান্ড। ইনিংসটা কিছুটা থিতু করে পাল্টা আক্রমণ চালান রুট আর জস বাটলার। টার্গেট করেন তারা সুলিমান বেনকে। দীর্ঘদেহী বাঁহাতি স্পিনারকে টানা দু বলে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন বাটলার। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ৫১ রানের এই জুটি ভাঙেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। চতুর্থ ছক্কার চেষ্টায় আউট হন বাটলার (২২ বলে ৩৬)। আরেক পাশে দারুণ খেলে ৩৩ বলে অর্ধশতক তুলে নেন ইংল্যান্ডের রান মেশিন রুট। স্টোকস এসেও সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালোই। তবে হঠাৎই আবার এলোমেলো ইংল্যান্ড। এক ওভারেই ডোয়াইন ব্রাভো ফেরান স্টোকস ও মইন আলিকে। ব্র্যাথওয়েটকে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন রুট (৩৬ বলে ৫৪)। ৪ বলের মধ্যে ১ রানে ইংল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট! ব্রাভোকেই পরে এক ওভারে দুটি ছক্কা মারেন ডেভিড উইলি। তার ১৩ বলে ২১ রান প্রাণ ফেরায় ইংলিশ ইনিংসে। ব্রাভোর বলেই আবার দারুণ এক ক্যাচে বদ্রি ফেরান লিয়াম প্লাঙ্কেটকে। হাতে ব্যথা নিয়ে মাঠও ছাড়তে হয় তাকে। শেষ ওভারে ক্রিস জর্ডান দলের রানকে নিয়ে যান দেড়শর ওপারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং গভীরতা আর রান তাড়ার দক্ষতায় এই রান আর যথেষ্ট হলো না।
অন্যদিকে, টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে ফাইনালে ৮ উইকেটে জিতেছে দলটি। রোববার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৪৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে গত তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
টুর্নামেন্টের সফলতম দলটির সংগ্রহ দেড়শ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান অধিনায়ক মেগ ল্যানিং ও এলিস ভিলানির। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৭ রানের জুটির উপহার দেন এই দুই জনে। ভিলানি ৫২ রান করতে খেলেন ৩৭ বল। তার আক্রমণাত্মক ইনিংসটি গড়া ৯টি চারে। ল্যানিং ৪৯ বলে ৫২ রান করতে ৮টি চার হাঁকান। শেষের দিকে ২৩ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এলিসে পেরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেনড্রা ডটিন ৩৩ রানে নেন দুই উইকেট। জবাবে ৩ বল বাকি থাকতে দুই উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টুর্নামেন্টে ফাইনালে এটাই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পরাজয়। স্টেফানি টেইলরের সঙ্গে হেইলি ম্যাথিউসের ১২০ রানের জুটি প্রথম শিরোপার পথে নিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ষোড়শ ওভারে ম্যাথিউসের বিদায়ে ভাঙে দলটিকে দারুণ সূচনা এনে দেওয়া উদ্বোধনী জুটি। ৪৫ বলে ৬টি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৬৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন ম্যাথিউস। দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক টেইলর। ৫৭ বলে খেলা তার ৫৯ রানের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চারে। ব্রিটনি কুপারকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সহজেই সারেন ডটিন (১৮*)। জয়ের পর মেয়েদের উদযাপনে যোগ দেন ড্যারেন স্যামি, আন্দ্রে রাসেলরাও।