টেকনাফের হ্নীলায় কতিপয় পুলিশের আস্কারায় ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকার একাধিক সিন্ডিকেট। অনেকটা ওপেন সিক্রেট এই অনৈতিক ব্যবসাটি চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। লেদার এক হুজুর ইতোমধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটের এজেন্ট হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেয়েছে। এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে এই হুজুরের কদর বাড়ছে দিন দিন। তাছাড়া জামাল হোসেন ও নুরুল হুদা নামের দুই আলোচিত ইউপি মেম্বার হলো ইয়াবার গডফাদার।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইতোপূর্বে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের বেশীরভাগ লোক ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাতারে রয়েছে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণ এমনকি মধ্য বয়সীরাও। এই ইউনিয়নের দুই ইয়াবা সম্রাট হলো ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার যথাক্রমে জামাল হোসেন ও নুরুল হুদা। সম্পর্কে তারা উভয়ে বেয়াই। ইতোপূর্বে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নুর মোহাম্মদের ভাই হলো বর্তমান ইউপি মেম্বার নুরুল হুদা। ভাইয়ের মৃত্যুর পর বর্তমান মেম্বার নুরুল হুদার উপর দায়িত্ব বর্তে ইয়াবা ব্যবসার। এই মেম্বার বর্তমানে নিজের ছেলে-মেয়ে, জামাই ও আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে পুলিশসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর অসাধু কর্তাদের যোগসাজসে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে নির্বিঘেœ। তার ইয়াবার ১৩টি সুনিদর্িৃষ্ট মামলাও রয়েছে। মেম্বার নুরুল হুদার ভাই নিহত নুর মোহাম্মদের মেয়ের জামাই আজম হলো ইয়াবা ব্যবসার বড় ভেন্ডার। এলাকায় জনশ্রুত যে, এই আজম নিহত নুর মোহাম্মদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। সে পলাতক অবস্থায় বেশীরভাগ সময় চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করে তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজকে সাথে নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লাখ লাখ ইয়াবার চালান হ্নীলা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পৌঁছে। মজার ব্যাপার হলো দু’ভাই আজম ও শাহনেওয়াজ ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল হোসেনের ছেলে। আজমের বিরুদ্ধে ইয়াবার সুনির্দিৃষ্ট ২টি মামলা রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে তার পিতা মেম্বার জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ইয়াবার কোন মামলা নেই। দু’টি মারামারির মামলা রয়েছে। তবে অবাক করার মতো ঘটনা হলো, সে বর্তমানে হ্নীলা ইউনিয়নের ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান! কোটি টাকার জোরে ইউপি মেম্বার হওয়ার পর সে টাকার জোরেই প্যানেল চেয়ারম্যানের পদটিও হাতিয়ে নিয়েছে। থানা পুলিশের একাধিক টিম মেম্বার জামাল হোসেন ও মেম্বার নুরুল হুদার বাড়ীতে ইতোমধ্যে কয়েকদফা অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, মেম্বার পুত্র আজমকে ধরতে পুলিশ বার বার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা।
এদিকে এই ইউনিয়নের লেদা মৌলভীপাড়ার আরেক ইয়াবা বেন্ডার হলো হোছন আহমদের ছেলে জিয়াউর রহমান (২৭)। সে পায়ের জুতার নিচে করে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করছে। সে একই এলাকার এক হুজুর এবং হ্নীলার মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রতিদিন ইয়াবা সংগ্রহের পর ঢাকায় খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাচার করছে। সম্প্রতি জুবায়ের নামের এক যুবক তার ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে চট্টগ্রামে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে উক্ত জুবায়ের রাতারাতি ছাড়া পেয়ে যায়। জিয়াইর রহমানের ইয়াবা ব্যবসার সহযোগির মধ্যে রয়েছে ভাই কামাল হোসেন ও একই এলাকার তজল আহমদের ছেলে ফজল আহমদ। ভাইয়ের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ইতোপূর্বে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় ২হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক হয়েছিল। একইভাবে ভাই কামাল হোসেনসহ ২জন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানায় জুতার মধ্য দিয়ে পাচার করার সময় ৪হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হয়। একই এলাকর এক হুজুর তাদের প্রতিনিয়ত ইয়াবা সরবরাহ দিচ্ছে। এলাকার অন্য ব্যবসায়ীরাও ওই হুজুরের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে পাচার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদ উল্লেখিতদের ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।