প্রবাসীদের পাঠানো আয় ও রফতানির ধারা অব্যাহত থাকায় রিজার্ভ বাড়ছে। বুধবার দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ২৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে দেশে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে রফতানিতে আয় হয়েছে ২৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।
কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে প্রতি মাসে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে রিজার্ভেও। এর বাইরে খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। আবার আর্ন্তজাতিক বাজারে ভারতীয় মুদ্রার দাম কমে গেছে। এর ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় কম অর্থ ব্যয় হচ্ছে।’
‘এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা রফতানি বাড়াতে মনযোগ দিয়েছেন। এর ফলে রফতানি আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভও বাড়ছে।’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে কেবল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে তা নয়, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ধরনের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের অর্ধেক সময়েই এই উদ্বৃত্ত ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছয় মাসে যেহেতু ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে, সেহেতু এই ধারা অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সহসা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনও আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ১৬৫ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শুরুতেই উদ্বৃত্তে ফেরে।
নিয়মিত আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনও ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ২৯ শতাংশ বাড়ায় সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।