কক্সবাজার রিপোর্ট :
আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাই ইয়াবার চালান পাচার করে আসছেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এমপি আবদুর রহমান বদি।
তিনি বলেছেন- নানা সময় তারা নানাভাবেই এসব পাচার করে থাকেন। এর আগে নিজেরাই পাচারকালে বড় চালানের ইয়াবা সহ ধরা পড়ার পর এবার পাচার করা হচ্ছে সংবাদকর্মীদের দিয়ে। এমপি বদি গতকাল শনিবার খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা পাচার রোধে যাদের নিয়োগ দেয়া হয় উল্টো তারা টাকার বস্তার বিনিময়ে একাজে জড়িত হয়ে পড়ে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি অভিযোগ তুলে বলেন- ‘আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি ২০০ টাকা দামের ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে পুলিশের নিকট জমা দেয়। থানায় রাতারাতি সেই জব্দ করা ট্যাবলেট বদলে যায়। পুলিশ সেই ২০০ টাকা দামের ট্যাবলেট কিছু সাংবাদিকদের হাতে বিক্রি করে। আর জব্দ করা ২০০ টাকা দামের ইয়াবার বদলে জমা দেখানো হয় ১০ টাকা দামের ট্যাবলেট।’
তিনি এ প্রসঙ্গ নিয়ে আরো বলেন, ইয়াবার চালান প্রতিরোধের দায়িত্ব নিয়ে তারাই ফ্রিষ্টাইলে পাচারে জড়িত হন। এমনকি এর আগে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই পাচার করেছেন। এরকম বড় চালান নিয়ে ধরাও পড়েছে তাদের সদস্যরা। পরবর্তীতে পাচারের কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ যারা ইয়াবা নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের দিয়েই পাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে ৪০ হাজার ইয়াবার চালান পাচারের সময় চট্টগ্রামে ধরা পড়ে যায় কক্সবাজারে কর্মরত একজন টেলিভিশন সংবাদদাতা। ইয়াবার চালান নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়া সেই সাংবাদিকের ট্যাবলেটগুলো নিয়ে একবারের জন্যও পুলিশ টুশব্দ করছে না। অথচ সাংবাদিকরাই বার বার লিখছেন-ইয়াবা নিয়ে যে টেলিভিশন সংবাদদাতা ধরা পড়েছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য। কিন্তু তবুও পুলিশ এ ব্যাপারে চুপ রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
গতকাল শনিবার কক্সবাজার বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে এমপি বদি দীর্ঘ বক্তৃৃতা করেন। তার বক্তব্যে ইয়াবা পাচার প্রসঙ্গই ছিল বেশী। একমাত্র ইয়াবার কারনে আমরা কক্সবাজারবাসী অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করে এমপি বদি বলেন- কক্সবাজারের বাসিন্দা পরিচয় দিলেই অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন। ইয়াবা পাচার বন্ধ না হবার অন্যতম কারন সর্ম্পকে তিনি বলেন-দেখুন ৫০ হাজার ইয়াবার চালান নিয়ে একজন পাচারকারী ধরা পড়ে মাত্র ২০/২৫ দিন কারা ভোগ করেই বেরিয়ে যেতে পারেন। তাই পাচারকারীরা মানসিকভাবে কয়েকটা দিন কারাগারে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। ইয়াবা পাচার রোধের জন্য তিনি অবিলম্বে ইয়াবা সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত ষ্পেশাল কোর্টে বিচার সম্পন্ন করার উপর জোর দেন।
এমপি বদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এমন তথ্যও দেন যে, বর্তমান সময়ে গভীর সাগর পথে ইয়াবা বাণিজ্য রমরমা হয়ে উঠেছে। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান পাচার হচ্ছে দিনরাত। কেননা এখন শীতকাল হওয়ায় সাগর একদম শান্ত রয়েছে- যা ইয়াবা পাচারে অনুকুল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা পাচার প্রসঙ্গে এমপি বদি বলেন- ‘আমি বর্ডার এলাকার এমপি। তাই ইয়াবা পাচারের সব বদনাম কেবল আমার বিরুদ্ধে। তবে একথা জোর গলায় বলি- জীবনেও মাদক ব্যবসা করিনি। টাকাই শুধু সুখ নয়-জীবনই সুখ।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ইতিপুর্বেকার ইয়াবার তালিকা নিয়ে এমপি বদি উষ্মা প্রকাশ করে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন-‘এরকম তালিকা কে করেছে? এটি সঠিক তালিকা নয়। আমি দাবী জানাচ্ছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার দিয়ে নতুন করে তালিকা করুন।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রশংসা করে বলেন, একমাত্র সাংবাদিকরাই তাদের লেখনি শক্তি দিয়ে সীমান্তের ইয়াবা পাচারে যথেষ্ট ভুমিকা রাখতে পারেন।
প্রসঙ্গত. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭৬৮ জনের করা তালিকাটিতে এমপি বদি সহ তার পরিবারের অনেক সদস্য ইয়াবা পাচার ও পৃষ্টপোষকতায় জড়িত থাকার তথ্য উল্লেখ রয়েছে।