ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে যা হলো, সেটিকে আর কী বলা যায়? যে ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যান এক বলেই দুই বার জীবন পেয়ে যান, যেখানে আরেকজন দুই বার নো বলে আর আরেকবার সীমানা প্রান্তে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান, সেটাকে চাইলে ‘আধিভৌতিকও’ বলে ফেলা যায়!
ম্যাচটা যেভাবে শেষ হলো, তার পর তো ‘ভুতুড়ে’ কথাটা আরও বেশি প্রযোজ্য। ভারতের স্কোরই যেখানে ১৯২ হওয়ার কথা ছিল না, সেখানে বিরাট কোহলি নামের একজন অতিমানবের কল্যাণে সেটা প্রায় দুইশ ছুঁই ছুঁই হয়ে গেল। ক্রিস গেইল ৫ রানেই ফিরে যাওয়ার পর ম্যাচটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল, সেটাই তারা জিতল ২ বল হাতে রেখে! ৭ উইকেটের জয়ের গল্পটা একসময় নিশ্চয় নাতিপুতিদের তারিয়ে তারিয়ে শোনাবেন স্যামিরা!
সেজন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ নিশ্চয় লেন্ডল সিমন্সের প্রাপ্য। চোটের জন্য বিশ্বকাপ দলেই যাঁর থাকার কথা ছিল না, তিনিই হয়ে গেলেন নায়ক। তবে ৫১ বলে ৮২ রানের ইনিংসটার জন্য সিমন্স নিশ্চয় ভাগ্যের কথাই সবার আগে বলবেন।
ভাগ্য নয় তো কী ? ১৮ রানে অশ্বিনের বলে বুমরা তাঁর দারুণ একটা ক্যাচ নিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বলটা নো। ৫০ রানের সময় আরও একবার পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ দিলেন, পরে দেখা গেল সেটিও নো বল। এখানেই শেষ নয়, ৬৯ রানের মাথায় বুমরার বলটা আবার উড়িয়ে মারতে গেলেন। কোহলি-জাদেজা মিলে দারুণভাবে সেটিকে ক্যাচ বানিয়ে ফেললেন। কিন্তু পরে দেখা গেল, কোহলির পা সীমানাদঁড়ি ছুঁয়েছে। ছয়!
সিমন্স যদি হন একিলিস, তাহলে পার্শ্বনায়ক ওডিসিয়াস অবশ্যই আন্দ্রে রাসেল। ২০ বলে ৪৩ রানের দুর্দান্ত ওই ইনিংস না খেললে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ বল বাকি থাকতে জয় পায় না।
কিন্তু বিরাট কোহলি তো ট্র্যাজেডির নায়ক হেক্টরই। আউট হয়ে যেতে পারতেন ১ রানেই। দুই বলের মধ্যে তিনটি রান আউট থেকে একরকম অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেছেন বিরাট কোহলি। সুযোগটা এর চেয়ে ভালোভাবে আর কাজে লাগাতে পারতেন না! শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত থেকেছেন।
ডোয়াইন ব্রাভোর নবম ওভারের তৃতীয় বলটা নো বল ছিল। পরের বলটা ফ্রি হিট, ব্রাভোর স্লো বল ব্যাটে লাগাতে পারলেন না কোহলি। কিন্তু কী মনে করে বেরিয়ে এলেন ক্রিজ ছেড়ে। উইকেটকিপার দীনেশ রামদিনের থ্রো স্টাম্পে লাগল না। ওদিকে ব্রাভো এগিয়ে এসে বলটা লুফে নিলেন। কোহলি তখনো ক্রিজ ছেড়ে অনেকটা বাইরে। হাত ছোঁয়া দূরত্ব থেকে ব্রাভোর থ্রোটা লাগালেই কোহলি আউট। কিন্তু সেটাই কীভাবে যেন স্টাম্পে লাগাতে পারলেন না। কোহলি এক বলেই দুইবার জীবন পেলেন। পরের বলেও আবার রান আউট হতে পারতেন, এবার রামদিন ফিল্ডারের থ্রো স্টাম্পেই লাগাতে পারেননি।
পরে অবশ্য কোহলি আরও দুইবার বেঁচে গেছেন। একবার ব্রাফেট কঠিন একটা ক্যাচ ধরতে গিয়ে চার বানিয়ে দিয়েছেন, শেষ ওভারে লেন্ডল সিমন্স ছেড়েছেন আরও একটা কঠিন ক্যাচ।
পরে বল হাতেও ভারতের ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন। সিমন্স আর চার্লস জনসন মিলে যখন যখন একটু একটু করে ম্যাচটা বের করে নিচ্ছিলেন, কী ভেবে ধোনি ১৪তম ওভারে বল তুলে দিলেন কোহলির হাতে। প্রথম বলেই জনসন আউট, মুম্বাই ওয়াংখেড়ে তখন মহানায়কের নামে জয়ধ্বনি তুলছে!
কে জানত, দিন শেষে সেই কোহলিই চলে যাবেন আড়ালে! ওয়াংখেড়ের উত্তাল জনসমুদ্র এমনভাবে থামিয়ে দেবেন সিমন্স-রাসেল! পর পর দুইটি কঠিন ম্যাচ জিতে তিন বারে এসে ভারতের সর্বনাশ হবে!