সাদিয়া নাসরিন:
“আমরা ও মানুষ, আমাদের গায়ে ও সাদা চামড়া আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সবাই আমাদের ময়লা চামড়াটাই দেখে, সাদা চামড়াটা দেখে না। আমরা তো পুলিশ, মানুষ নই”…. মাত্র সতের দিন আগে পুলিশ বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা একথাগুলো বলেছিলেন।
ক’দিন আগে বনানী থানায় না গেলে আমার কখনো জানা হতোনা, এই “পুলিশ” রা কিভাবে মানুষের জীবনযাপন করে। রোজার মাসে ইফতার করার সময় ও নেই, তেমন ব্যবস্থা ও নেই। নতুন থানা, ভাল করে সবার বসার জায়গাও নেই। আমি সবার ইফতার করার জন্য কিছু আম পাঠিয়েছিলাম। ওসি সালাউদ্দিন সাহেব খুব অবাক হয়ে বলছিলেন, “পুলিশের সাথে ও মানুষ সম্পর্ক তৈরি করে!!”
কিছুক্ষণ আগে একজন সালাউদ্দিন সাহেব, একজন ওসি নিজের প্রাণ দিয়ে জানালেন, ওনারা “পুলিশ”, মানুষ নন। সমুখ সমরে বুক পেতে দাঁড়ানো সেনাপতির তো কোনো মানুষের জীবন থাকতে নেই! মানুষ কী আর কিছু মানুষের জীবন নিরাপদ করতে গিয়ে বুলেটে বুক পেতে দেয়? আমি দিই, আপনি দেন? জামাত বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় কতজন পুলিশ জীবন দিয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা কি কারো জানা আছে?
কিন্তু আমি অতি আবেগপ্রবণ মানুষ বলে আমি অল্প ক’দিন পরিচয়ে এই মানুষটার মৃত্যুর খবর শুনে খুব ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পেয়েছি, হতভম্ব হয়েছি। ঝাপসা চোখে গাড়ি চালাতে চালাতে কেবল দেখছিলাম একজন লুই ভাই এর সন্তানের হতভম্ব মুখ, স্ত্রীর নিঃস্ব হয়ে যাওয়া চোখ।
পাশে বসা আমার স্বামী বলছিলো, ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালাও। হ্যাঁ আমি চোখের পানি চোখেই ঢুকিয়ে ফেলে রাস্তার আলোয় চোখ রেখে ঠান্ডা মাথায় ভুলে যেতে চেয়েছি কয়েকদিন আগে দেখা সাহসী দীপ্তমান পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সাহেবকে। গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে মানুষটিকে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত বাম বুকে বুলেট নিয়েও মুখে হাসি নিয়ে বসে থাকতে।
আমি শুধুই দেখি, নিস্পন্দ শরীরে একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছেন, যিনি সবশেষ কবে শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিলেন কে জানে? তিনি আজ ঘুমিয়েছেন। শান্তির ঘুম। তিনি ঘরে ফিরবেন বলে অপেক্ষায় প্রিয়তমা স্ত্রী, ভালোবাসার সন্তানরা। তিনি ফিরবেন। আজ তিনি আর পুলিশ নন। একজন মানুষ। একজন বাবা। প্রিয়তম স্বামী, কারো সন্তান। আর অনেকের লুই ভাই।
আমার কানে বাজছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বলা আপনার কথাগুলো,”আর কতদিন এই রাজনীতি করবেন, এবার আদর্শের রাজনীতি করেন”।
ভালো থাকুন সালাউদ্দিন ভাই, আপনার আত্মার শান্তি হোক।
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”।