কয়লা থেকে আরও ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বিদেশি বিনিয়োগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি যৌথ কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন ও পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর’র সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে।
এ বিষয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন উপযোগী জমি ও অবকাঠামোর ব্যবস্থা করবে। এরপর দুই দেশের একটি যৌথ কোম্পানি গঠন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।”তিনি জানান, মূল প্রকল্পটিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় হতে পারে। আর প্রাথমিক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৪৫ কোটি টাকা।মহেশখালীতে বর্তমানে জাপানের অর্থায়নে ‘সুপার ক্রিটিক্যাল’ প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন।নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিকভাবে ‘বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ ও সুরক্ষা এবং ফিজিবিলিটি স্টাডি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কার্যপত্রে দেখা গেছে, প্রাথমিক প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৭১৭ কোটি আর বাকি অর্থ দেবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে এক হাজার ৩৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রকল্পের সঙ্গে মূল রাস্তার যোগাযোগ সড়ক তৈরি, ভূমি উন্নয়ন এবং সাগর ও নদী ভাঙ্গন থেকে ভূমি রক্ষাবাঁধ করা হবে। প্রকল্পটি বিশ্লেষণের জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক-মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় তোলা হয়। এতে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে খাস জমিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় প্রকল্পটির জন্য চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মূল প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির এমডি কাশেম বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে প্রাথমিক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল প্রকল্পটি চূড়ান্ত হতে পারে। তারপর আগামী বছরের মধ্যেই মূল প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড আহমদ কায়কাউস বলেন, “প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। মূল প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর; জমি দেবে বাংলাদেশ। উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিন্দিষ্ট একটা মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের কাছে বিক্রি করবে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি।”