মহেশখালী উপজেলার ক্রাইমজোন হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির দীর্ঘ দিনের বিবদমান দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপ জালাল বাহিনী ও জোনাব আলী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ২৬ জানুয়ারী মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে দু’ক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া,গোলাগুলি ও বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের নারী পুরুষসহ অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। প্রতি পক্ষের দেয়া আগুনে ২টি বাড়ী ভষ্মিভূত হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরীহ লোকজন বাড়ীঘর ছেড়ে নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়ার জালাল বাহিনী ও জোনাব আলীর বাহিনী মধ্যে দফায় দফায় শ্বশস্ত্র সংর্ঘষ একাধিক বার বন্দুক যুদ্ধসহ বিরোধ চলে আসছে। এসব ঘটনায় মহেশখালী থানার পুলিশের উপপরির্দশক এস,আই পরেশ কারবারীসহ অন্তত ৫/৬ জন খুন হয়েছে। এ দু’বাহিনীর অব্যাহত সন্ত্রাসী আগ্রাসনে নানা ঘটনা পেরিয়ে জালাল বাহিনীকে হটিয়ে এলাকা ছাড়া করে সর্বশেষ এলাকায় অবস্থান করছিল জোনাব আলী বাহিনীর পক্ষের লোকজন। প্রতিপক্ষের অবস্থানের কারণে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছে জালাল বাহিনীর লোকজন। সম্প্রতি জালাল বাহিনীর প্রধান জালাল জেল থেকে বেরিয়ে এলে তারা এলাকায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোর ৪টার দিকে জালাল বাহিনীর লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বিশাল বাহিনীর ৫০/৬০ জন শ্বশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুরো রণপ্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের ছেড়ে যাওয়া বাড়ী ঘর এলাকায় উঠে। এতে প্রথম দিকে জোনাব আলী বাহিনীর লোকজন পাহাড়ে দিকে চলে যায়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানা ও কালারমার ছড়া পুলিশ বিটের বিপুল পরিমান পুলিশ বিরোধ পূর্ণ এলাকার আশে পাশে অবস্থান নিলে দু’পক্ষ মুখোমূখি সংর্ঘষ থেকে বিরত খাকে। তবে দুপুরের দিকে পুলিশ এলাকা ছাড়লে জোনাব আলী বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ী এলাকা থেকে নেমে আসলে বিকাল ৪ টায় উভয় পক্ষ সম্মূখ ভাবে বন্দুক যুদ্ধে তুমুল গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয় পক্ষের ভারী অস্ত্রের শতশত রাউন্ড গুলির শব্দে পুরো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং এলাকার নিরীহ নারী পুরুষ ও শিশুরা বাড়ীঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এলাকা এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন মামলার আসামী হওয়ায় তাদেরকে গোপনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে বিধায় সকলের নাম জানা যায়নি। তবে এদের মধ্যে জোনাব আলী বাহিনী পক্ষের মোক্তার আহমদের পুত্র মো: রুবেল (২২), সিরাজ মিয়ার পুত্র আনোয়ার হোসেন (২৪) ও জোনাব আলীর পুত্র আবু শামার স্ত্রী (২৫) ও হোয়ানক উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন এস,এস,সি পরিক্ষার্থী ছাত্রী জাফর আলমের মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে জালাল বাহিনীর পক্ষের ৪ জন আহত হওয়ার দাবি করা হলেও তার বিস্তারিত জানা যায়নি। আহতদেরকে পাহাড়ী এলাকায় গ্রাম্য ডাক্তার নিয়ে এবং গোপনে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় এক পর্যায়ে জালাল বাহিনীর ১৫/২০ জন সদস্যকে নিজেদের পক্ষের একটি বাড়ীতে প্রতি পক্ষ জোনাব আলী বাহিনীর লোকজন ঘেরাও করে আটকে ফেলে। এসময় প্রতিপক্ষ ওই বাড়ীর রান্না ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। বাড়িটিতে আগুন জ্বলাকালীন কালারমার ছড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছে আসলেও এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে শতশত রাউন্ড গুলির শব্দে পুলিশ অসহায়ের মত পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর পাড়ে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে মহেশখালী থানার আরেক দল পুলিশ এসে তাদের সাথে যোগ দিলে পুলিশ সন্ত্রাসীদের ঘেরাও করা বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলে জোনাব আলী বাহিনী কিছুটা পিছু হটলে আগুন লাগা বাড়ী থেকে আটকা পড়া সন্ত্রাসীরা বের হয়ে শ্বশস্ত্র অবস্থায় পদ্মপুকুর পাড় এলাকায় দিয়ে প্রধান সড়ক পার হয়ে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে উপকূলীয় চিংড়ী প্রকল্প এলাকায় পালিয়ে যায়। এসময় প্রতি পক্ষ জোনাব আলী বাহিনীর শতশত শ্বশস্ত্র লোকজন একই পথে পিছু নিয়ে প্রতি পক্ষকে ধাওয়া করে আবারো এলাকা ছাড়া করে। এসময় গোরক ঘাটা- জনতা বাজার প্রধান সড়কে হাজার হাজার জনতা এ দু সন্ত্রাসী বাহিনীর শতশত শ্বশস্ত্র ক্যাডারের মহড়া প্রত্যক্ষ করে। এঘটনার শেষের দিকে পুলিশ না আসলে জালাল বাহিনীর অন্তত ১৫/২০ সদস্য আগুনে পুড়ে অথবা প্রতি পক্ষের গুলিতে মারা যেত বলে এলাকাবাসীদের মন্তব্য। এঘটনার পরে সন্ধ্যায় জালাল বাহিনীর আতœীয় এমদাদ মিয়া, মকছুদ আলম, শাহাদত কবির প্রকাশ লালাইয়া নামের ৩জনের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করলে ৩টি বাড়ী পুড়ে ভষ্মিভূত হয়ে যায়। বাড়ীতে অগ্নি সংযোগের ব্যাপারে দু’পক্ষ পরস্পরকে দায়ি করছে।
এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভয়ে সাধারণ লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। গ্রামটিতে স্বাভাবিক কর্মকান্ড থমকে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইকুল আহমেদ ভুঁইয়া জানান, তিনি ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রনে এনেছেন। তবে আহতদের ব্যাপারে তার জানা নেই বলে জানান।