মহেশখালী উপজেলার পান চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। গত দু’মাস ধরে মহেশখালীর উৎপাদিত মিষ্টি পানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষীদের মাঝে খুশির আমেজ দেখা দেয়। তবে চলতি মৌসুমে পান চাষ করার শুরুতেই অতি বৃষ্টির কারণে পানের বরজ নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হলেও বিক্রি মৌসুমে আবহাওয়া পান চাষের অনুকূলে থাকায় ফলন যেমন ভাল হয়েছে তেমনি পানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে এ এলাকার পান চাষীরা। এবছর পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক পান চাষি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমার ছড়া, ছোটমহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ির ঢালু ও আবাদি কৃষি জমিতে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পান চাষীরা। পাহাড়ি এলাকায় পান চাষ দুই/ তিন বছর স্থায়ী হলেও কৃষি জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ৬ মাস। কৃষি জমিতে পান চাষ অক্টোবর/ নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে তা মে মাসে শেষ হয়। আর পাহাড়ি এলাকায় পান চাষ যে কোন সময়ে করা যায় বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। উপজেলার গোরকঘাটা, বড় মহেশখালী ইউনিয়নের নতুন বাজার, হোয়ানক ইউনিয়নের টাইম বাজার, পানিরছড়া বাজার, কালারমারছড়া ইউনিয়নের কালারমারছড়া বাজার, জনতাবাজার ও শাপলাপুর বাজারে পানের বাজার বসে। সপ্তাহে দুই দিন এসব পান বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পানের হাট জনতাবাজার গিয়ে দেখা যায়, পান বেচা–কেনা করতে শতাধিক চাষী পান নিয়ে বাজারে বসে আছে। চট্টগ্রাম, বাঁশখালী, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পান ব্যবসায়ীরা চাষীদের কাছ থেকে পান কিনে নিচ্ছে। পরে এসব পান ট্রাক ভর্তি করে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। বাঁশখালী থেকে আসা পান ব্যবসায়ী রুহুল কাদের জানান, সপ্তাহে দুই দিন মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানের হাট বসে। আর এসব পানের হাটে চাষীদের কাছ থেকে পান সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই সব পান চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে পানের ন্যায্য দাম পাওয়ায় মহেশখালীর পান চাষীরা খুশি বলে তিনি জানিয়েছেন।শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট এলাকার পানচাষী আবুল কালাম(৪৫)বলেন, গত দু’ মাস ধরে বাজারে পানের মূল্য ধাপে ধাপে অনেক বেড়ে গেছে। গত মাসে এক বিরা পানের দাম ছিল মাত্র ১৭০ টাকা। এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে প্রতি বিরা ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে পানের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা অনেক লাভবান হবেন বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে ১৫শ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে বিল বরজ দেড়শ হেক্টর ও পাহাড়ি বরজ ১৩শ ৫০ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ৬টি পানের বরজ করা যায়। আর পানের বরজের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। পানচাষীদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এক হেক্টর জমিতে পান চাষ করতে চাষীদের খরচ লাগে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বছরে প্রতি হেক্টর জমিতে ১শ ৭ মে.টন পান উৎপাদন হয়। প্রতি হেক্টরে পান বিক্রি হয় প্রায় ১৬ লাখ ১২ হাজার ৫শ টাকা। এতে চাষীরা খরচ বাদ দিয়ে লাভবান হন প্রতি হেক্টরে প্রায় ৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। প্রতি বছর মহেশখালী থেকে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫শ মে.টন পান দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে।