মহেশখালী দ্বীপটি ঘিরে নেয়া হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের এক মহাপরিকল্পনা। দ্বীপের দক্ষিনে ও পশ্চিমে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে জেগে উঠা চরভুমি নিয়েই নতুন নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দ্বীপের জমি নিয়ে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ভুমি ব্যবহারের একটি লে-আউট প্ল্যান প্রস্তুত করার কাজও শুরু হয়েছে। দ্বীপের জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৪ টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন।
এই দ্বীপেই স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প। দ্বীপে আরো স্থাপন করা হচ্ছে গ্যাস ও জ্বালানী তেলের ডিপো ও পাইপ লাইন। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভুমি ব্যবহারের জন্য লে আউট প্ল্যান চুড়ান্ত করতে বৃহষ্পতিবার কক্সবাজার আসছেন সরকারের উচ্চ পদস্থ ১৯ সদস্যের একটি দল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২ টি মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তরা থাকছেন এই দলে। দলটি মহেশখালী দ্বীপে শনিবার পর্যন্ত সরেজমিন লে আউট প্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ও করবেন। মহেশখালী দ্বীপে একের পর এক বড় মাপের শিল্প কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় ভুমি ব্যবহারে এই দলটির মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে এলাকার লোকজন মনে করছেন।
দেশের মূল ভূখন্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন মহেশখালী দ্বীপের আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৪৯১.৮৬ বর্গকিলোমিটার। এই দ্বীপের মৌজা সংখ্যা ৩০ টি, ইউনিয়ন ৮টি এবং একটি পৌরসভা। চার লক্ষাধিক লোকের বসবাস দ্বীপটিতে। উত্তর-দক্ষিন লম্বা দ্বীপের পশ্চিমে গভীর সাগরের কারনে এই দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামুদ্রিক যোগাযোগ সহজ হওয়ায় দ্বীপে আমদানী করা গ্যাসের ডিপো স্থাপন সহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তদুপরি দ্বীপে নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে নতুন জেগে উঠা চরভুমি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান-‘মহেশখালী দ্বীপের ৩০ টি মৌজার মধ্যে ৯ টি মৌজায় সাগরের বিশাল এলাকা জুড়ে চরভুমি জেগে উঠছে। ইতিমধ্যে ২৬ হাজার ৩০০ একর নতুন জেগে উঠা চর সনাক্ত করা হয়েছে। জেগে উঠা চরের জমি রিতীমত খুলে দিয়েছে দ্বীপটির ভাগ্যের দরজা।’ তিনি জানান- দ্বীপের মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কালারমারছড়া, উত্তর নলবিলা, অমাবশ্যাখালী, কুতুবজোম, ঘটিভাঙ্গা, হামিদরদিয়া ও সোনাদিয়া মৌজায় সাগর থেকে জেগে উঠেছে এ পরিমাণ জমি।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, ইতিমধ্যে সাগরের চরভরাট বেশী জমি সনাক্ত করা হয়েছে সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা এলাকায়। যার পরিমাণ কমপক্ষে ১৬ হাজার একর। দ্বীপের এ পরিমাণ জেগে উঠা চরের জমি দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে হালনাগাদ সরকারের নামে রেকর্ড করার জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, শুধুমাত্র মহেশখালী দ্বীপেই ৪ টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭২ একর জেগে উঠা চরের জমি নিয়েই স্থাপন করা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক জোন।
প্রসঙ্গত, দেশের এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এক হাজার দুইশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতায় এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪০০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। জাইকা ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে মাতারবাড়ীর একই স্থানে আরো ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনযোগ্য আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। সেই সাথে দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া নামক মৌজায় আরো ৫ হাজার ৬০০ একর জমি অধিগ্রহনেরও কাজ শুরু হয়েছে।
এ পরিমাণ জমিও বিদ্যুৎ প্রকল্প সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহন করার কথা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। তিনি জানান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ পরিমাণ জমি অধিগ্রহন করছে। বিনিয়োগকারিদের পরবর্তীতে এ পরিমাণ অধিগ্রহন করা জমিতেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেয়া হবে। এছাড়াও মহেশখালী দ্বীপে স্থাপন করা হবে আমদানী করা গ্যাস ও তেলের ডিপো এবং পাইপ লাইন। মহেশখালী দ্বীপ থেকে ৩২ কিলোমিটার দুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত স্থাপন করা হবে এসব পাইপ লাইন। এসব ছাড়াও মহেশখালী চ্যানেলের পুর্ব তীরে পেকুয়ায় আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক কাজও চলছে। সেই সাথে পেকুয়ায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি সাব মেরিন ঘাঁটিও স্থাপন করা হবে।