মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বহু মানুষকে নিঃস্ব করেছে
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
৩৬৯
বার পড়া হয়েছে
কেউ নিজের জমিতে লবণ চাষ করতেন, কেউবা বর্গাচাষি। কেউ লবণ সরবরাহ করতেন, কেউবা মাছের চাষ করতেন। ভালোই কাটছিল দিন। মাতারবাড়ীর সেই মানুষের। এখন কর্মহীন। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প মানুষের ঘরে অভাব ডেকে এনেছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণকৃত ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এখানকার মানুষ লবণ ও চিংড়িঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু এখন তা বন্ধ। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২০ হাজার মানুষ বেকার। তাদের জীবিকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সবারই এখন চরম দুঃসময়।
আহম্মদ হোসেন (৪৬)। পাঁচ একর জমিতে লবণ চাষ করতেন। মাসে আয় হতো অন্তত ২০ হাজার টাকা। এতে কর্মসংস্থান হতো আরও আটজনের। এই আটটি পরিবারের অন্তত ৫০ জনের খাবারের জোগাড় হতো এখান থেকে।
এমনি আরেকজন আবদুল কাদের (৩৮) লবণ চাষ ও ব্যবসায় জীবিকা। এক মেয়ে ও চার ছেলে নিয়ে সাতজনের সংসার। প্রকল্প এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জমি চলে গেছে তার। এ জমি থেকে তার মাসিক আয় ছিল ৪০ হাজার টাকা। এখন তার হাতে কোনো কাজ নেই। কিছু টাকা ধার করেছেন। পাঁচটি গরু ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মগডেইল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় গেলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ জানান, এখানে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে এলাকাবাসীর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জীবনের শেষ সম্বল জমিটুকু হারিয়েও প্রকৃত জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় তাদের বিকল্প কোনো কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ফলে এই এলাকায় কাজের সংকট দেখা দিয়েছে। তারা জমির ন্যায্যমূল্য চেয়েছিলেন। কিন্তু বহু মানুষ এখনো টাকা পাননি, যারা পেয়েছেন, তারাও ন্যায্যমূল্য পাননি।
ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে লবণ চাষের ভরা মৌসুম। এই সময়ে সব মানুষের হাতেই কাজ থাকার কথা। লবণ মাঠ থাকার কথা জমজমাট। কিন্তু প্রকল্প এলাকার আওতাভুক্ত বিশাল লবণের মাঠ খাঁ খাঁ করছে। পড়ে আছে বিরান। আর অন্যদিকে লবণ চাষের ওপর নির্ভর এলাকার সব শ্রমজীবী মানুষ হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন। অনেকে ধারদেনা করে চলছেন। অনেকে ঘরে গচ্ছিত অলংকার, গরু-ছাগল কিংবা ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন।
মগডেইল গ্রামের বাজারের চায়ের দোকান, হোটেল রেস্টুরেন্টে বসলে কিংবা পাড়ার ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলেও কষ্টের জীবন ধারণের বিষয়টি আঁচ করা যায়। এই বাজারের বহু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বেচাকেনা নেই। ব্যবসায়ীদের মোটা অঙ্কের বকেয়া পড়ে যাওয়ায় তারা দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লবণচাষি ও শ্রমিকদের অনেকে পরিবার-পরিজনসহ চট্টগ্রাম শহরে চলে গেছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই সংকটের ভেতর দিয়ে এলাকার মানুষ কীভাবে টিকে আছে, প্রশ্ন করলে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা বলেন, কাজ ও খাদ্যের সন্ধানে গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে শহরে চলে গেছে। গ্রামে ধারকর্জ দেওয়ার মতো লোক নেই।
মগডেইল বাজারের পুরোনো মুদি দোকানি মো. তাজুমদ্দিন। ১৭ বছর ধরে এই ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭২ টাকা বকেয়া পড়ে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে নিজে দেনা আছেন ৭২ হাজার টাকা। সিদ্দিক আহম্মদের দোকানে গিয়ে দেখা গেল কোনো মালামাল নেই। সামান্য পরিমাণ মালামাল থাকলেও তা কেনার লোক নেই।
বিদ্যুৎ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ও মাতারবাড়ীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এলাকার মানুষ তাদের ন্যায্য পাওনাটা চায়। শ্রমজীবী মানুষদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।