মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সমাজের সব স্তরের মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত যে ভাষা সেটাকেই পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের মাতৃভাষার স্বকীয়তাও রক্ষা করতে হবে।’
মাতৃভাষা শিক্ষা নেওয়ার পর অন্য ভাষা শিখলেই প্রকৃত শিক্ষা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সমাজকে আমি আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা যেটা এত রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি সেটা যেন ধারণ করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি যে ইতিহাস সেটা আমরা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে।’
শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতারী মমতাজ।
নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ১৬ জনকে প্রধানমন্ত্রী একুশে পদক প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদকপ্রাপ্তির সাইটেশন পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ডা. সাঈদ হায়দার, ড. জসীম উদ্দিন আহমেদকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই বিভাগে মরহুম সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার (মরণোত্তর) পুরস্কার গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠ সন্তান মিসেস রোকেয়া বেগম।
শিল্পকলায় গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অভিনেত্রী নাট্যকার ও প্রযোজক বেগম জাহানারা আহমেদ, শাস্ত্রীয় সংগীতে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, সংগীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বেগম শাহীন সামাদ, নৃত্যে নৃত্যনাট্যকার আমানুল হককে একুশে পদক দেওয়া হয়।
চিত্রকলায় শিল্পী মরহুম কাজী আনোয়ার হোসেনের (মরণোত্তর) পক্ষে সহধর্মিনী মিসেস সুফিয়া আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংবাদিকতায় বিশিষ্ট সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত পিণ্ডির প্রলাপের স্রষ্টা ও বঙ্গবন্ধুর সাবেক প্রেস সচিব তোয়াব খানকে এ বছর একুশে পদক দেওয়া হয়।
গবেষণায় অধ্যাপক ড. এ বি এম আব্দুল্লাহ এবং লেখক ও নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি মংছেন চীং মংছিনকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ভাষা ও সাহিত্যে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কথাশিল্পী জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ এবং কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীকে এ বছর একুশে পদক দেওয়া হয়।
পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি পদক, দুই লাখ টাকা, একটি সম্মাননাপত্র এবং একটি রেপ্লিকা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কমৃকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস।