কক্সবাজারে ম্যাডাম রেবির পরিচিতি শীর্ষ মানব পাচারকারী হিসেবে। উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনারপাড়া গ্রামের এক সময়ের হতদরিদ্র কৃষক পরিবার নুরুল কবিরের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার আজকের রেবি । পুলিশের খাতায় নাম থাকলেও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন মানব পাচারের বিভিন্ন মামলা থেকে। ২০১২ সাল থেকে রেবি ম্যাডাম মানব পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হন। তার স্বামী নুরুল কবির বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে তার বাড়িতে রেখে সুযোগ বুঝে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিতেন। এভাবে চলত তার মানব পাচার বাণিজ্য। আর অল্প দিনেই রেজিয়া আক্তার হয়ে যায় রেবি ম্যাডাম এবং কোটি টাকার মালিক।
এক সময় তার স্বামী জীবন বীমা কোম্পানিতে চাকরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। নুরুল কবির টানাপড়েনের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে জড়িয়ে পড়েন মানব পাচারে। এ সময় উপকূলের মেরিন ড্রাইভ ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কোটবাজার সি-বিচ সড়ক দিয়ে অহরহ লোকজন জড়ো হতো সোনারপাড়া বাজারে। বলতে গেলে এ সময় সোনারপাড়া, ইনানী, নিদানিয়া এলাকায় মালয়েশিয়া যাত্রীর হাট বসত। রেবির স্বামী নুরুল এ সময় লোকজন সংগ্রহ করে সাগরপথে পাচার করে দেওয়ার জন্য টাকার বিনিময়ে তার বাড়িতে আশ্রয় দিতেন। জানা গেছে, থাকা-খাওয়া বাবদও তারা অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসহায় মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের কাছ থেকে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রেবি ম্যাডামকে মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও পরে জামিনে মুক্তি মেলে তার। এর আগে তার স্বামী নুরুল কবিরকে মানব পাচারের অভিযোগে উখিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৪ সালে ২৩ নভেম্বর স্বামীকে মুক্ত করতে কক্সবাজার আদালতপাড়ায় তদবিরের জন্য ঘোরাঘুরির সময় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রেবি ম্যাডামকে আবার আটক করে। এ সময় পুলিশ তার ভ্যানিটি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪ লাখ ও ২৭ লাখ টাকার দুটি ব্যাংকের চেকও উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। কিন্তু বারবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে জড়িয়ে পড়েন মানব পাচার বাণিজ্যে।
উপকূলীয় এলাকায় এ রেবি ম্যাডামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৫০ সদস্যের একটি শক্তিশালী মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় রয়েছে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর থানায় রয়েছে দুটি মানব পাচার মামলা। তার স্বামী নুরুলের বিরুদ্ধেও রয়েছে মানব পাচারের ছয়টি মামলা।
এ ব্যাপারে উখিয়া সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, শুধু ম্যাডাম রেবি নয়, যাদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।