সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দল বিএনপি’র অন্দর মহলে আগামী মার্চের কাউন্সিল নিয়ে ঝড় বইছে। যদিও বরাবরের মতো দেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া। তবে হাসিনা-খালেদার সেকেন্ডম্যান কে হচ্ছেন-তা নিয়ে তৃণমূলের (মাঠ পর্যায়ের) নেতাদের আলোচনা-সমালোচনায় ঝড় উঠেছে পাড়া-মহল্লার চা-দোকানেও।
সরকারি দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকেই রেখে দেয়া হতে পারে। ভারত আমেরিকা কানেকশন ঠিক রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে (আশরাফ) হাত ছাড়া করবেন না।
দলীয় সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের ছেলে সোহেল তাজকে কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক করার একটা চিন্তা করছেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারমুক্ত করে পূর্ণ দায়িত্ব দিতে চান। কিন্তু তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা থাকায় ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে। দলের পরীক্ষিত নেতাদের মধ্যে কাউকে এ দায়িত্বে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল নোমান ও নজরুল ইসলামের নাম গুরুত্বের সাথে আলোচনা হচ্ছে।
আগামী মার্চ মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি-আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল এবং ১৯ মার্চ বিএনপি’র কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তবে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করেন সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব দরকার। বর্তমানে দল ক্ষমতায় আছে এই কারণে দলের কাজ এগিয়ে নেওয়াতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে সরকারে থাকলেও দলের সাংগঠনিক ভিত সুদৃঢ় করা প্রয়োজন। দলের ভেতরে অনেক অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে, সেগুলোও মেটানো দরকার। এখন চাইলেও বেশির ভাগ নেতাকর্মী দলের সাধারণ সম্পাদককে কাছে পান না ও তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। যদিও তিনি সব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন। প্রধানমন্ত্রী গত বছর দলের সাধারণ সম্পাদকের উপর কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মন্ত্রণালয়ও পরিবর্তন করেন। প্রথমে দফতরবিহীন করেন এর কয়েকদিনের মাথায় আবার দফতর দেন। এবার তাকে আবারও সাধারণ সম্পাদক পদেই রাখা হবে নাকি গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে তাকে দায়িত্ব দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে সেটা আলোচনায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, কারো কারো মতে দলের ভবিষ্যত দিনের কথা চিন্তা করে আরো কর্মঠ সাধারণ সম্পাদক দরকার। সৈয়দ আশরাফ সৎ ও যোগ্য। তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো এত বড় দলের জন্য যে সময় দেয়া দরকার সেটা তার পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যে সব নাম আলোচনায় রয়েছে এরমধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। ফরিদপুরের এ রাজনীতিক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বলে দলে প্রচার রয়েছে। এছাড়া রাজনীতির মাঠে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে তার একটি আলাদা ইমেজ রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে বিভিন্ন বিদেশি কূটতিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে তার দূতিয়ালি বেশ লক্ষণীয়। কৃষি বিষয়ক সম্পদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও সোহেল তাজ। তবে সৈয়দ আশরাফ মাঠে কম থাকলেও অনেকেই মনে করেন যোগ্যতা ও দক্ষতা বিবেচনায় সৈয়দ আশরাফকে স্বপদে বহাল রাখা দরকার।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, এই ব্যাপারে এখনও বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামীতে হবে কি না জানি না। তবে কাউন্সিলররা নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেক্রেটারিকে বেছে নিবেন। আর সেটা যদি তারা না করেন সভাপতিকে দায়িত্ব দেন তিনি তার পছন্দমতো একজনকে নির্বাচন করবেন।
এ বিষয়ে দলের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার অনেক আগেই দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু তখন করা হয়নি। এখন আর সেই সময় ও বয়স নেই। অপরদিকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আমি এই ব্যাপারে কোনো চিন্তা করছি না। আসলে দলের সেক্রেটারি কে হবেন এটা কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে আমার মনে হয় আমাদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকই পুনরায় সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পাবেন।
এদিকে বিএনপি’র কাউন্সিল ১৯ মার্চ। বিএনপি’র এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নেই। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারমুক্ত করা হতে পারে এমন কথা শোনা যাচ্ছে তাকে পুরোপুরি দলের মহাসচিব করা হবে। তারপক্ষে দলের ভেতরে ব্যাপক একটা সমর্থন রয়েছে। তবে তাকে মহাসচিব করা হবে এমনটি এখনই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান চূড়ান্ত করেননি। তার বিরুদ্ধে থাকা ৮৬টি মামলা, এরমধ্যে তার শারীরিক অবস্থা ও তার গত তিন বছরের কর্মকান্ডও বিবেচনা করা হচ্ছে। তাছাড়া এই সময়ের বেশির ভাগ সময় কারাগারে থাকার কারণে তিনি দলের জন্য ঐভাবে কাজ করতে পারেননি। আগামী দিনে ৮৬ মামলার কোনো মামলায় তার শাস্তি হলে তাকে কারাবন্দি থাকতে হতে পারে। সেই হিসাবে খালেদা জিয়াকে কোনো কারণে সরকার গ্রেফতার করলে, তারেক রহমান বিদেশে থাকলে ও মির্জা ফখরুল ইসলাম কারাবন্দি থাকলে কে দল চালাবেন সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে। এই জন্য মির্জা ফখরুল ইসলামের বিকল্পও বিবেচনা করা হ্েচছ। তবে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত তাকেই পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হতে পারে। তবে সেখানে বিকল্প নাম হিসাবে রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেতা বলেন, মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম ছাড়াও আরো আলোচনায় নাম রয়েছে, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম।