মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের জন্য প্রজেক্টর, মনিটর, স্কিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি পেয়েছে ২ বছর আগে, কিন্তু অদ্যাবদি একটি ক্লাসও করতে পারেনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সব সরকারি দামি সরঞ্জাম ব্যবহার না করেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র আবছার উদ্দিন বলেন, অন্যান্য স্কুলের ছাত্রদের কাছ থেকে শুনেছি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সম্পর্কে আমরা আজ পর্যন্ত দেখিনি। তবে শুনেছি আমাদের স্কুলের জন্য ও সবকিছু সরঞ্জাম দিয়েছে সরকার। তাহলে কেন আমরা আধুনিক এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি সেটা জানি না। আলাপকালে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেম বলেন, মাল্টিমিডিয়ার সবকিছু আছে মূলত শ্রেণিকক্ষের কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা যাচ্ছে না। সামনে আমাদের শেণিকক্ষ নতুন করে করা হবে তখন ক্লাস হবে। তিনি শিকার করেন এর ফলে আধুনিক শিক্ষা থেকে পেছনে পড়ে আছে শিক্ষার্থীরা।
উখিয়ার সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছমা আকতার বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম বা শিক্ষা নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। ৩ বছর আমি স্কুলে আছি এর মধ্যে কোন দিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পায় নি। আমার জানা মতে এখানে এধরনের কোন ক্লাস হয় না।
আলাপকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিউল করিম বলেন, আমাদের মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম আছে মূলত বিদ্যুতের অভাবে ক্লাস করা যায় না। স্কুল চলাকালিন বিদ্যুৎ থাকে না। আর কম্পিউটার শিক্ষক আজিজুর রহমান এর দায়িত্বে আছে, তিনিও একটু অসেচতন বলে জানান তিনি। আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজিজুর রহমান কোন দিন কম্পিউটার নিয়ে তাদের ধারনায় দেন নি। এককথায় আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক পিছিয়ে তারা।
রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মাঝেমধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয়, তবে তা খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে শিক্ষকরা কিছু বুঝায় তা আমাদের ধারণায় আসে না। আর উনারাও ঠিকমত পাঠদান করাতে পারে না। উনারা মূখে বলে একটি প্রজেক্টরে দেখায় আরেকটি। আর আমাদের ক্লাসে বসিয়ে রেখে উনারা প্রজেক্টর নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করে কিছুই ঠিক মত বলতে পারে না।
সদর উপজেলার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক বলেন, আমাদের মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম আছে তবে ক্লাস হয় না। আমাদের প্রধান শিক্ষক নিয়মতি স্কুল করেনা। যার ফলে শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে না। আর মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা কষ্ট তাই কেউ এ কাজ করতে চায় না। আর আমাদের মনিটর ২ বার চুরি হয়ে গেছে। আমাদের মতে কেউ ইচ্ছা করে মনিটর চুরি করেছে। আলাপকালে প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের মনিটর চুরি হয়ে যাওয়ার ফলে ক্লাস করা যায় না। তবে আমরা মাঝে-মধ্যে করেছি। আর চুরি হয়ে যাওয়া মনিটর কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাইট গার্ডকে জরিমানা দিতে বলেছে সে যখন দেবে তখন আবার কেনা হবে।
ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন বলেন, আমাদের মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম আছে তবে ক্লাস রুমের সংকটের কারনে ঠিকমত ক্লাস করা যায় না। সামনে আমাদের নতুন ভবন হবে তখন ভাল ভাবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা যাবে।
পোকখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদেরও সরঞ্জাম আছে তবে ক্লাস রুম নাই। যার ফলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা যায় না। আর ল্যাপটপটি নষ্ট হয়ে আছে অনেক দিন। সেটা টিক করানোর ব্যাবস্থা করেছি তার পর দেখি যদি ক্লাস চালু করা যায় কিনা। তবে ঐ স্কুলের এক শিক্ষক বলেন সরকারি ল্যাপটপটি কয়েক জন শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে নষ্ট করে ফেলেছে। এখন তার দায়ভার আমাদের উপর চাপাচ্ছে। মূলত সব সরকারি জিনিস ব্যবহার না করেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খুরুশকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এখানে কিছু দিন আগে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম দেখার জন্য একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছিলেন উনার সামনেই স্কুলে ল্যাপটপ খুঁজে পাওয়া যায় নি। এরপর আরো অনেকদিন ধরে ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে মাঝে মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের নামে সবাইকে একসাথে বসিয়ে কিছু শিক্ষা পদ্ধতি দেখানো হতো। তবে আমরা শুনেছি প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ২ টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা বাধ্যতামূলক। আর আমাদের স্কুলে বর্তমানে শিক্ষকদের কোন্দল খুব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সে জন্য লেখা পড়ার মান দিন দিন নি¤œমুখি সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার। চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদের ল্যাপটপ নস্ট তবে আমরা সবার জন্য নিজস্ব ল্যাপটপের ব্যবস্থা করেছি। তবুও সমস্যা হচ্চে ক্লাস রুম সংকট।
এব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে করেছে। সরকার প্রতিটি এমপিওভুক্ত স্কুলে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম দিয়েছে অনেক স্কুলকে একাধিক বারও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঐসব স্কুল থেকে নির্দিষ্ট শিক্ষকদের বেশ কয়েক বার হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ক্লাসের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করতে হবে। এর পরও যদি কোন স্কুল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করাতে না পারে সেটা তাদের ব্যর্থতা। আর মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য কোন বিশেষ শ্রেণী কক্ষের দরকার হয় না। যে কোন পরিস্থিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা যায় এটা মন মানসিকতার ব্যাপার। তিনি বলেন আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো যদি কোন স্কুল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু না করে তাহলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।