শহর কক্সবাজার এখন যেন টমটমের শহরে পরিনত হয়েছে। টমটম জটে রাস্তায় হাঁটা-চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অনাড়ি টমটম চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে অভিযোগ হচ্ছে, পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মহলের দুর্বলতায় বাড়ছে অবৈধ টমটম। পার পেয়ে যাচ্ছে অনাড়ি চালকরা। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে শহরে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কিছুটা সফল হলেও নতুন করে টমটম জটে পড়েছে বলে মনে করেন শহরবাসী। এ দিকে অভিযোগ রয়েছে, শহরজুড়ে অবৈধ টমটমের রাজত্বের পেছনে অন্যতম কারণ ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। কোন অবৈধ টমটম ধরা পড়লেও ‘টু-পাইস’ দিলেই তা ছাড়া পেয়ে যায়। একটি টমটম ধরা পড়লে ২২০০ টাকা দিলেই সমাধান। অনেক সময় নেতাদের ‘লাল ফোনে’ও টমটম ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ট্রাফিক পুলিশ, এমন অভিযোগ দির্ঘদিনের।
এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের ইনসপেক্টর (টিআই) বজলুর রহমান জানান, গত মাসে দুই বার অভিযান চালানো হয়। এ মাসে এখনো অভিযান পরিচারিত হয়নি। অবৈধ টমটম ধরা পড়লে ২২০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজির অভিযোগের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এরক কোন ঘটনা ঘটলেই সাথে আমাদের খবর দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
টিআই বজলুর বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় দুই হাজার মত টমটম চলাচলের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু শহরে কি পরিমাণ টমটম চলাচল করে তা পৌর কর্তৃপক্ষই জানেন না। পৌরসভা অনুমোদন কর্তৃৃপক্ষ হলেও অসংখ্য টমটম চলছে লাইসেন্স বিহীন। তবে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে বলেও তিনি জানান।
কক্সবাজার শহরে একাধিক সড়ক থাকলেও প্রধান সড়কটিই একমাত্র যানবাহন চলাচলের উপযোগী। শহরের আভ্যন্তরিন সড়কগুলো দখল বেদখলে কাহিল। তাই প্রধান সড়কেই চাপ পড়ে সব ধরণের যানবাহনের। শহরকে যানজটমুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন শহরে বড় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। তবে ছোট যানবাহন চলাচলের সুযোগে টমটম নামের ইজিবাইক গুলো দখল করে নেয় শহরের রাস্তা-ঘাট। ধূঁয়ামূক্ত পরিবেশ সম্মত হওয়ায় প্রশাসন শহরে ইজিবাইকগুলোর চলাচল পারমিট করে। কিন্তু এই সুযোগে শহরে প্রয়োজনের চারগুণেরও বেশী ইজিবাইক চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে টমটম জট।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরে যে পরিমান টমটমের প্রয়োজন তার চার গুণ বেশী টমটম চলাচল করছে। এসব টমটম এক তৃতিয়াংশের অনুমতি থাকলেও অন্য গুলোর কোন অনুমতি নেই কোন কর্তৃপক্ষের। তার পরেও তিন হাজারের অধিক টমটম নির্র্বিঘেœ চলাচল করছে শহরে।
দেখা গেছে, অধিকাংশ টমটম চালক অনাড়ি ও অপরিপক্ষ। চালকদের অনেকেই সাগরে মাছ ধরার কাজ করত, সেখানে মন্দা দেখা দেয়ায় শহরে এস টমটম চালা শুরু করে। আবার কেউ ছিল রিক্সা চালক, এখন হয়ে গেছে টমটম চালক। অথচ কারো কোন প্রশিক্ষণ এবং অবিজ্ঞতা নেই তাদের। তাই রাস্তায় দেখা যায় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা। এছাড়াও অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ চুরি করে শহরবাসীর বিড়ম্বনা বাড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ ফিটনেস বিহীন টমটমের লাইট জ¦লেনা। রাতের বেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও ঘটে দূর্ঘটনা।
অনুসন্ধানে অরো জানা গেছে, গত তিন বছরে কক্সবাজার শহরে চলাচলকারী টমটমের ধাক্কায় এক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে তিন শতাধিক মানুষ। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বিমান বন্দর সড়কের কানাইয়া বাজার এলাকায় অবৈধ টমটমের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন মাওলানা আবু তৈয়ব কুতুবী (৫৫)। তিনি কক্সবাজার শহরতলীর কুতুবদিয়া পাড়া শাহ ওয়াজেদ আলী সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। এছাড়াও তিনি মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা ইসমাঈল কুতুবীর আপন চাচাত ভাই। ওই দিন টমটমের ধাক্কায় মাওলানা আবু তৈয়ব মাথায়, কুমরে ও পায়ে গুরতর আঘাত পেয়ে আহত হয়েছিলেন। স্থানীয়রা তাকে কক্সাবজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হলেপথে তিনি প্রাণ হারান।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান মাবু বলেন, শহরে টমটম চলাচলে পৌরসভার অনুমতি আছে দেড় হাজার মত। অথচ অবৈধভাবে চলছে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি টমটম। অবৈধ চলাচলকারী টমটমের বিরুদ্ধে প্রতিমাসে একবার অভিযান চালানো হয়ে থাকে। অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, পৌরসভায় জনশক্তির অপ্রতুলতা থাকলেও অভিযান থেমে নেই। অনেক সময় অবৈধ টমটম আটক করা হলে বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণে ছেড়ে দিতে হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে নতুন করে টমটমের লাইসেন্স না দিলে টমটম জট অনেকায়শে কমে আসবে বলে জানান শহরবাসী।