ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে আজ সোমবার ১০০ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চারটি নালিশি মামলাসহ মোট ১৯টি মামলা হলো।
আজ সোমবার সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করেন যুক্তরাজ্য-প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা সৈয়দ আবুল কাশেম। তিনি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
সৈয়দ আবুল কাশেমের আইনজীবী মোহাম্মদ শফিকুল আলম ইসলাম জানান, বেলা ১১টায় তিনি মামলাটি সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী বিচারিক হাকিম আদালতের (সদর) বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল আমিনের কাছে দাখিল করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী সময়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলার আরজিতে সৈয়দ আবুল কাশেম উল্লেখ করেছেন, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য যাচাই-বাছাই না করে মাহফুজ আনাম ইচ্ছাকৃতভাবে ডেইলি স্টার পত্রিকায় মিথ্যে ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করেছেন। এতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং মানহানি ঘটেছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মামলার বাদী ব্যথিত হয়েছেন।
গতকাল রোববার মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার আদালতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি মানহানির মামলা হয়। বাকি ১২টি মামলা হয়েছে আটটি জেলায়, যার চারটিতে ২১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মানহানি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ৯ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দুই দিনে হয়েছিল পাঁচটি মামলা। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ, খুলনা, কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুরে করা চারটি মামলায় মোট ১১১ কোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
১৯টি মামলার মধ্যে ১৮টি করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও প্রজন্ম লীগের নেতারা। অপর একটি মামলা করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর একজন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি।
৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে এক-এগারোর সময় সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বিচ্যুতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম তাঁর পত্রিকায়ও এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল বলে স্বীকার করেন। এর পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে বিচার চান। এক দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সাংসদ ডেইলি স্টার বন্ধ করা এবং মাহফুজ আনামের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করেন। এর পরদিন থেকে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে।
বেশির ভাগ মামলার অভিযোগও প্রায় একই রকম। অভিযোগে বলা হয়, এক-এগারোর সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা বাস্তবায়নে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে মাহফুজ আনাম তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য প্রকাশ করেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এ কারণে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়। এতে তাঁর দল ও মামলার বাদীদের মানহানি হয়েছে।