মুক্তচিন্তার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বিকৃত রুচি ও নোংরা রুচির পরিচয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে গেল মুক্তচিন্তার। আমি তো এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না।’ নিরাপত্তার জন্যই বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাইরের অনুষ্ঠান শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখা কখনো গ্রহণযোগ্য না। আমার ধর্ম আমি পালন করি। আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখে, সেটা আমরা কেন বরদাশত করব? এখন একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে, ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে গেল মুক্তচিন্তার। আমি তো এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না। আমি এখানে দেখি নোংরামি, পর্ন। এত নোংরা নোংরা লেখা কেন লিখবে? যাকে আমি নবী মানি, তাঁর সম্পর্কে নোংরা কথা কেউ যদি লেখে, সেটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। ঠিক তেমনি অন্য ধর্মের যাঁরা আছেন, তাঁদের সম্পর্কে কেউ যদি লেখে, এটাও কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। এই সমস্ত নোংরা কথা, পর্নের কথা কেন লিখবে? আমি তো মনে করি, এটা সম্পূর্ণ নোংরা মনের পরিচয়, বিকৃত মনের পরিচয়। এটা কোনো ধর্ম পালন নয়। এটা সম্পূর্ণ তাদের চরিত্রের দোষ এবং তারা বিকৃত মানসিকতায় ভোগে। এ জন্য তারা এ ধরনের লেখে। আশা করি, এই ধরনের লেখা কেউ লিখবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজন মুসলমান হিসেবে প্রতিনিয়ত আমার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। সেখানে কেউ যদি লেখে, এতে আমার নিজেরও কষ্ট হয়। আর এই লেখার জন্য কোনো অঘটন ঘটলে দোষ সরকারের ওপর আসবে কেন? সবাইকে সংযমতা নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে একটা শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে। অসভ্যতা কেউ করবেন না। অসভ্যতা করলে তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা নেব না।’ তিনি বলেন, ‘আর মানুষ খুন করার মধ্যে কোনো সমাধান নাই। একজন লিখল, আরেকজন খুন করে সেটার প্রতিশোধ নেবে, এটা তো ইসলাম ধর্ম বলেনি। বিচারের দায়িত্ব আল্লাহ তাদের দেননি। একজন লিখল তাকে খুন করে ফেলতে হবে। এ বিচার তো আল্লাহ তাকে দেননি। এ বিচার আল্লাহ করবেন। আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন, তিনি শেষ বিচার করবেন। তো, আল্লাহর ওপর কি তাদের ভরসা নাই? আল্লাহর ওপর যাদের ভরসা নেই, তারাই এসব খুন-খারাবি করে। কারণ তারা আল্লাহ-রাসুল মানে না।’
মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকার সব সময় সচেতন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টির জন্য আমরা কিছু কিছু অনুশাসন দিই। সে জন্য বলেছি, সন্ধ্যার আগে অর্থাৎ পাঁচটার মধ্যে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। এতে দেখলাম কারও কারও মন্তব্য কেন সেটা বলা হলো? যেহেতু আমাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপের দেশগুলিতে—প্যারিসে বোমা হামলা হলো, বেলজিয়ামে বোমা হামলা হয়েছে। আমেরিকার স্কুলে ঢুকে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। এই নিরাপত্তা কতটা দিতে পারব, নিশ্চয় আমদের সরকারের কিছু নির্দেশনা যাবে। সবাইকে সেটা মেনে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশনা দেওয়াতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। যিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, তাঁকে আমি বলতে চাই যদি কোনো অঘটন ঘটে তার দায়িত্ব কে নেবে? তিনি নেবেন? যদি ঘটে তাহলে তাঁকেই নিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।’
দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বলেন, সব জাতি-ধর্মের মানুষকে নিয়ে বর্ষবরণের যে উৎসব, তা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে বাংলাদেশে। বছরটা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে, এটা যেন অব্যাহত থাকে।
সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।