মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপনে দফায় দফায় ব্যয় বাড়ছে। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এবার ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ও বাড়ছে দেড় বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ব্যয় ও সময় বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পাঁচ জেলায় (মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট) ৫টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপনে ২০১০ সালে এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এসব ইনস্টিটিউটে দেশের বেকার যুবক ও যুব-মহিলাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে নদী ও সমুদ্রগামী জলযানসমূহে সরবরাহের পাশাপাশি কর্মোপযোগী জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতে সমাপ্ত না হওয়ায় বর্তমানে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, একনেকে অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় আগে দুই দফা বাড়িয়ে ২১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় দফায় ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ২৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ছাত্রীদের আবাসনের জন্য নতুন মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা জরুরি; তাই সংশোধিত প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রাক্কলন অনুসারে নতুন ভবন নির্মাণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইনস্টিটিউটগুলোতে পিডিবির পরিবর্তে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ সরবরাহ গ্রহণ করায় নিরাপত্তা জামানত বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি, যানবাহন ও আসবাবপত্র ক্রয়―এসব কারণে ব্যয় বেড়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে প্রকল্প সার-সংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবদুল মান্নান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যুবক ও যুব মহিলাদের মেরিন টেকনোলজি ও শিপ বিল্ডিং বিষয়ে যুগোপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে বিদ্যমান শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক পরিসরে দারিদ্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া দেশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নীতি কৌশলের সাথে প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্পটি গুরুত্ব বহন করে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৫টি মেরিন ইনস্টিটিউটের জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ত নির্মাণকাজ, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সরবরাহ, ক্লাসরুম, অফিস ও হোস্টেলের জন্য আসবাবপত্র ক্রয় ও সরবরাহ, প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল, সরঞ্জাম ইত্যাদি ক্রয় ও সরবরাহ, মহিলাদের জন্য আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ ও আসবাবপত্র সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন ইত্যাদি।