আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞÑ আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের দ্বাদশ আয়োজন। এতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দামাল ছেলেরা। অনেকে তো বলেই ফেলছেন, এবার ‘কিছু একটা’ করে ফেলবে বাংলাদেশ।
এবার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ১০টি দল অংশগ্রহণ করবে। বিশ্বকাপের এই সময়ে রোজার ঈদ। বোঝাই যাচ্ছে রোজার এই ঈদের অনুষ্ঠানমালায় ভাগ বসাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বিশেষ করে টিভি নাটক হারাবে দর্শক। কারণ গত রোজার ঈদে দর্শক মেতেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার প্রভাব পড়বে ঈদের চলচ্চিত্রেও।
এমনিতেই এবার টিভি অনুষ্ঠানের দর্শকে পুরোপুরি ভাগ বসিয়েছে ইউটিউব। অবশ্য ক্রিকেটের প্রতিটি ম্যাচ কেড়ে নেবে টেলিভিশন-ইউটিউবের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের সব দর্শক। প্রতিবছরের ঈদের অনুষ্ঠান নির্মাণে রমরমা হয়ে ওঠে বিভিন্ন শুটিং হাউস, শুটিং স্পটগুলো। তুমুল ব্যস্ততায় সময় পার করেন তারকারা। সাধারণত সপ্তাহব্যাপী আয়োজন সাজানো হয় দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোয়।
অনেক চ্যানেল ১০ দিনেরও আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। এ আয়োজনের আওতায় সব চ্যানেল মিলিয়ে প্রচার হয় প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ নাটক-টেলিছবি। প্রচার হয় সংগীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, তারকাদের নিয়ে আড্ডা ও নানা রকম শো।
বিশ্বকাপের কারণে এবার অনেক চ্যানেল সপ্তাহব্যাপী আয়োজন থেকে সরে আসছে বলে জানা যায়। নাটক-টেলিছবির সংখ্যা এবার কম থাকছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা। বিজ্ঞাপনদাতারা ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়টাকে নাটক-টেলিছবির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। একই কারণে তারা বিজ্ঞাপনের মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। এতে করে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে টিভি চ্যানেলগুলোয়।
পর্যাপ্ত অনুষ্ঠানের জোগান পেতে সব টিভি চ্যানেল আগের বছরগুলোয় বিভিন্ন এজেন্সিতেও ধরনা দিত। আবার অনেক সময় দেখা যেত, সময়ের অভাবে অনেক অনুষ্ঠান বাদ দিতে হতো চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এবারের চিত্রটা ভিন্ন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় নেই উল্লেখ করার মতো ব্যস্ততা। খ্যাতনামা প্রডাকশন হাউসগুলো অন্যবারের তুলনায় নীরব। এজেন্সিগুলোতেও নেই তেমন উত্তেজনা।
রাত-দিন এক করে কাজ করা অভিনেতা-নির্মাতাদের সংখ্যাও এবার কম। আগে চ্যানেলে চ্যানেলে দেখা যেত জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আ খ ম হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, মেহজাবিন চৌধুরী, আফরান নিশো, তানজিন তিশাদের। কিন্তু এবার তারাও কম কাজ করেছেন। কারণ ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
একাধিক তারকা অভিনয়শিল্পীই দাবি করেছেন, মাঠে যখন মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা পারফর্ম করবে, তখন আমরাই সেটা দেখার জন্য কাজ বন্ধ করে বসে থাকব। তা হলে সাধারণ মানুষ কী করবে, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।
অনেকে বলছেন, ঈদ উৎসব আর বিশ্বকাপ এবার একসঙ্গে চলবে। যার ফলে চ্যানেল মালিকরা নাটকের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা বিশ্বকাপ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে টেলিভিশনে নাটক-টেলিছবি দেখাতে না পারলেও ইউটিউবের কল্যাণে সবাই তাদের প্রিয় তারকার কাজগুলো পরবর্তী সময়ে দেখতে পারবেন। মম বলেন, ‘টিভি নাটকে বিশ্বকাপের প্রভাব পড়বে এটি সত্যি।
কিন্তু নাটক এখন শুধু টেলিভিশনের জন্য নির্মাণ হচ্ছে না। টেলিভিশনের বাইরে ইউটিউব ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও নাটক যাচ্ছে। যার কারণে বিশ্বকাপের প্রভাব নাটক নির্মাণের ওপর পড়ছে না। এবারের ঈদে আমার অর্ধেক নাটক থাকছে ইউটিউবে।
নির্মাতারাও ইউটিউব চ্যানেলগুলোর প্রতি বেশ আগ্রহী।’ ঈদে বিশ্বকাপঝড় নাটক-টেলিছবির ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন জানতে চাইলে মেহজাবিন বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি অন্যরকম আগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। সুতরাং এটির প্রতি সবার দৃষ্টি থাকবে। টিভি চ্যানেলগুলো এ ক্ষেত্রে দর্শক হারাবে। কিন্তু দর্শক ঠিকই নাটক দেখবে।
সেটি চ্যানেলে দেখতে না পারলেও ইউটিউবে দেখে নেবে। কারণ নাটক দেখার ক্ষেত্রে দর্শক এখন টিভির চেয়ে ইউটিউবকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’ ঈদে এবার প্রায় ২০টি ইউটিউব চ্যানেলে শতাধিক নাটক ও টেলিছবি আসবে। উল্লেখযোগ্য চ্যানেলগুলো হলোÑ বঙ্গবুম, ডেডলাইন এন্টারটেইনমেন্ট, সিনেমাওয়ালা, সিডি চয়েস, ঈগলস, ধ্রুব টিভি, সেভেন টিউনস এন্টারটেইনমেন্ট, সাউন্ডটেক, এফ-থ্রি, নাটক বক্স ইত্যাদি।
দর্শক কম থাকার ভয়ে অনেক প্রযোজক এ ঈদে তাদের নাটক-টেলিছবি বা অনুষ্ঠান বিক্রি না করে জমিয়ে রাখছেন। বিশ্বকাপের প্রভাব থামলেই সেগুলো ভালো দামে বাজারে ছাড়বেন। বিশ্বকাপে ছোট পর্দার ঈদ অনুষ্ঠানের প্রভাব নিয়ে ছোট পর্দার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই দুশ্চিন্তার। কারণ ক্রিকেট এ দেশের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। আমি নিজেও ক্রিকেটভক্ত।
ছেলে-বুড়ো সবাই বাংলাদেশের খেলা হলে তাদের জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর প্রিয় দেশ যখন বিশ্বকাপে খেলবে, আবেগটাই থাকবে অন্যরকম। টিভিতে কী অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটা বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখবে সবাই। আর যেহেতু এটা বিশ্বকাপ, তাই বাংলাদেশের খেলা ছাড়াও অন্য খেলাগুলো দেখতে চাইবে অনেকে। তাই কিছুটা তো প্রভাব পড়বেই।
এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হবে।’ ছোট পর্দার পাশাপাশি বিশ্বকাপের প্রভাব পড়বে পর্দাতেও। ঈদে মালেক আফসারীর ‘পাসওয়ার্ড’, সাকিব সনেটের ‘নোলক’ ও অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’ ছবিগুলো মুক্তি পেতে পারে। এসব ছবিতে শাকিব খান, বুবলী, ববি, ইমন, স্পর্শিয়া, তারিক আনাম খান, মিশা সওদাগর, ডনসহ অনেক তারকাশিল্পী অভিনয় করেছেন। তবে সিনেমা হল মালিকরা আতঙ্কে ভুগছেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে।
সারাবছর ঈদকে ব্যবসার ‘সুবর্ণ সময়’ বলে মনে করেন সিনেমার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। তাই সিনেমা হল মালিকসহ অনেক প্রযোজক-পরিচালক আশঙ্কা করছেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবার ঈদের ছবিগুলোয় ব্যবসায়িকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই সিনেমার বুকিংয়ে সতর্ক ও মিতব্যয়ী থাকছেন তারা। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, “বাংলাদেশের যে কোনো ক্রিকেট ম্যাচই প্রভাব ফেলে। বিশ্বকাপ হলে প্রভাবটা আরও আতঙ্কের। আমি ঈদে শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি চালাব। দেখা যাক কী হয়। আশা করছি, দর্শক সিনেমা হলে ঈদের ছবি দেখতে আসবে।”