অবসরের ঘোষণাটাই এসেছিল বড় চমক হয়ে। শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হারের পর মেসি বলে দিলেন, ‘জাতীয় দলে এটাই আমার শেষ।’ এরপর ডিয়েগো ম্যারাডোনা থেকে আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রী, অন্য খেলার তারকা থেকে সাধারণ মানুষ, সবার মুখে একটাই আর্তি, ফিরে এসো মেসি। বুয়েনস এইরেসে তাঁর মূর্তি উন্মোচিত হলো, টুইটারের ‘নো তে ভায়াস মেসি’ প্রচলনটা বুয়েনস এইরেসের বিমানবন্দরেও ২৪ ঘন্টা দেখানো হলো…মেসিকে ফেরাতে আর্জেন্টাইনদের চেষ্টার কমতি নেই।
সেই চেষ্টায় আর্জেন্টিনা সফল হলে হয়তো দল-দেশ নির্বিশেষে ফুটবল বিশ্বই খুশি হবে। তর্কসাপেক্ষে বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়, ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়টিকে ফুটবল প্রেমী মাত্রই দেখতে চাইবেন জাতীয় দলে। তবে মেসি ফিরলেও তিনিই আর্জেন্টিনার প্রথম অবসর ভেঙে ফেরা ‘বিখ্যাত নাম্বার ১০’ হবেন না। তাঁর আগে যে এই কীর্তি গড়ে গেছেন আরও একজন—স্বয়ং ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা!
কী আশ্চর্য! বিদায় নেওয়ার ধরণটাও একই! এমনই বড় একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে অবসর নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি, পরে আবারও দলের প্রয়োজনে গায়ে চাপিয়েছেন জাতীয় দলের জার্সি।
১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারার পর ম্যারাডোনার সেই কান্নার কথা হয়তো অনেকেই ভোলেননি। সেই হারের ক্ষত এতটাই পুড়িয়েছে ম্যারাডোনাকে, ম্যাচের পরই নাকি সাংবাদিকদের বলে দিয়েছিলেন, আর্জেন্টিনার জার্সিতে আর নয়। অনেকটা মেসির বিদায় নেওয়ার ধরণের মতো। ম্যারাডোনার ঘোষণায় অবাক সাংবাদিকেরা ১৫ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, আসলেই কি আর কখনো আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলবেন না? তাতে ম্যারাডোনার উত্তর ছিল এমন, ‘না, আমার মনে হয় না।’
সে সময় ম্যারাডোনার বয়স ছিল ৩০ বছর, মেসির এখনকার বয়সের চেয়ে ১ বছর কম। অবশ্য ততদিনে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ম্যারাডোনা কিংবদন্তি হয়ে গেছেন। একেবারেই বিদায় বললেও হয়তো কেউ ম্যারাডোনার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে ফেলত না। তবে আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর আবারও ফিরে এসেছিলেন। ১৯৯৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে (অবশ্য এর মধ্যে কোকেইন নেওয়ার দায়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞাও ছিল) আর্জেন্টিনার যখন দুরবস্থা চলছিল, প্লে অফ খেলতে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে, তখন আবার ফিরে এসেছিলেন ম্যারাডোনা। দলকে তুলেছিলেন বিশ্বকাপে।
শুধু কোকেইনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাদ দিয়ে মেসির ক্ষেত্রেও তেমন কিছুই চাইছেন ভক্তরা। সারাজীবন যাঁকে আদর্শ মেনে চলেছেন, ছোটবেলার সেই ‘হিরো’ কে এখানেও কি অনুসরণ করবেন আর্জেন্টিনার ‘বিদায়ী’ অধিনায়ক? বিশেষ করে ম্যারাডোনার মতো করে যেখানে দেশকে কিছু জেতানোও হয়নি এখনো। সূত্র: ফক্স স্পোর্টস।