দেশে জঙ্গি সংগঠন আইএস আছে কি নেই এই বির্তকেই কেটে গেল ২০১৫ সাল। মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়া। তিন বিদেশি নাগরিক হত্যা। হোসনে দালান ও কাদিয়ানি মসজিদে হামলা। গুম,খুন ও শিশু রাজনসহ নানা স্থানে শিশু হত্যার ঘটনা। লেখক-ব্লগারসহ সাংবাদিক ও পুলিশ হত্যার ঘটনা ঘটে বিদায় বছরে। জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি দিয়ে শুরু হওয়া বছরে ঘটেছে মসজিদ, মন্দিরে হামলার মতো ঘটনা।
সদ্য বিদায় বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়। উৎকণ্ঠা নিয়ে ২০১৫ সাল শুরু হলেও গোটা বছর রাজনৈতিক মাঠ ছিল আওয়ামী-লীগের নিয়ন্ত্রণে। আর সরকার কিংবা বিরোধী দলে না থেকেও আলোচনা-সালোচনার তুঙ্গে ছিল বিএনপি। বছর জুড়ে রাজনীতির মাঠ বিক্ষোভ-আন্দোলনে টাল-মাটাল থাকলেও শেষ হচ্ছে পৌর-নির্বাচনের প্রশমনের মধ্য দিয়ে।
বিদায় বছরে আদালত পাড়ার প্রধান আলোচনার বিষয়ই ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা। এ বছরই মানবতাবিরোধী অপারাধের অভিযোগে সর্বোচ্চ সংক্রান্ত ফাঁসির কার্যক্রম করা হয়। দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী তিন রাজনীতিবিদের ফাঁসি কার্যকর করা ছিল সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর দুই শীর্ষ নেতা সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছাড়াও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করে সরকার দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন।
পেট্রোলবোমা, চোরাগেুাপ্তা হামলায় দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে বছরের শুরুটা হয় বিএনপি-জামায়াতের নজিরবিহীন নাশকতা দিয়ে।
এ বছর ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামী-লীগ। এর আগে ৩ জানুয়ারি বাসভবন ছেড়ে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান নেয় বেগম খালেদা জিয়া। ৫ই জানুয়ারি সমাবেশের উদ্দেশ্যে বের হতে না পেরে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
রাজপথে প্রকাশ্যে ২০ দলের কর্মসূচি না থাকলেও চোরাগেুাপ্ত হামলায় আতঙ্কিত ছিল দেশবাসী। আর টানা তিন মাস গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় কাটে খালেদা জিয়ার। এপ্রিলে দুর্নীতি মামালায় আত্মসমার্পন ও জামিনে বাসায় ফিরেন এই নেত্রী।
তবে টানা ৯২ দিন অবরোধ ও পেট্রোলবোমার আগুনে প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। বার্ন ইউনিট হয়ে উঠে সহিংস রাজনীতির প্রতীক।
গুম, খুন আর গ্রেফতার আতঙ্কে গোটা বছর কাটে বিএনপি নেতাদের। দলে যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের হঠাৎ গুম হওয়া আবার তিন মাস পর ভারতের শিলংয়ে খোঁজ পাওয়ার পরও নিষ্পত্তি হয়নি সালাউদ্দিন আহমেদের গুম রহস্যের।
জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন বছর জুড়ে এমন গুঞ্জন থাকলেও তারা শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেনি। তবে এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব আর এরশাদের চটক সব মন্তব্য আলোচনার খোড়াক জুগিয়েছে অনেককে। শুরুর তিন মাস বাদ দিয়ে সারা বছর দেশ অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও সুশাসনের অভাব এবং ভারসাম্যহীন রাজনীতির ঘাতটির কথা বলেছেন অনেক বিশ্লেষক।
বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রচিত হয় কলঙ্কময় অধ্যায়ের। বৈশাখের রঙ্গে জাতি যখন নিজেকে রাঙ্গিয়ে নিচ্ছিল ঠিক তখনই শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলন মেলায় ঘটে নারীর সম্ভ্রম হানির ঘটনা।
সিলেটে শিশু রাজন, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার তারাপুর গ্রামে কবিরাজি চিকিৎসার নামে শিশু সন্তান সুমাইয়াকে হত্যা, খুলনার টুটপাড়ায় রাকিব, ২৩ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হয় শিশু। পরে অবশ্যই চিকিৎসকের অক্লান্ত চেষ্টায় বেঁচে যায় শিশু সুয়াইরা। রাজধানীর খিলক্ষেতের মস্তুলে কিশোর নাজিম হত্যা, রাজশাহীর আঁখি ও লতিফা হত্যা, বরিশালের সাবিনা, চট্টগ্রামের পিক দে, আসাদুল, ঢাকার শাহজাহানপুরে শিশু সামিউল হত্যাসহ আরও অনেক রয়েছে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে এই বছরে।
শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৭ মাসে ১শ’৯১ শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। একই সময় হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে আরও ১১ জনকে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় মোটর সাইকেলে এসে তিন যুবক গুলি করে হত্যা করে ইতালীর নাগরিক সিজার তাভেলাকে। এর পাঁচদিনের মাথায় রংপুরে একই কায়দার খুন হন জাপানির নাগরিক হোশি কুনিও। ১৮ নভেম্বর আরেক ইতালীয় নাগরিককে গুলি ও কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
চাঞ্চল্যকর নানা ঘটনার দায় স্বীকার করে আইএস বিবৃতি দিলেও সরকারেরর দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের দাবি ছিল দেশে আইএস বা অন্যকোনো আর্ন্তজাতিক সংগঠন নেই। এমন দাবির মাঝেই বগুড়ায় সিয়া মসজিদে হামলা হয়।
বিজয়ের মাসে সারাদেশ যখন আনন্দে ভাসছিল ঠিক তখনই দিনাজপুরে ছয় দিনের ব্যবধানে কান্তজিউ ও ইসকন মন্দিরে হামলা হয়।
নারায়নগঞ্জে গণ পিটুনিতে আট ডাকাতের মৃত্যু প্রমাণ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপর আস্থাহীনতায় ভুগছে মানুষ।
বছরের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর মিরপুরের অভিযান চালিয়ে বিষ্ফোরকসহ তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই জঙ্গিদের গ্রেফতারের পরপরই রাজশাহীর বাগমারায় আহমদীয়া মসজিদে বোমাসহ হামলে পড়ে জঙ্গিরা।
আশুলিয়ায় পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে একজন কনস্টেবলকে হত্যাসহ সারা বছরই এখানে ওখানে আইন
শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা যেন ছিলো নিত্য বিষয়ই।
বছর জুড়ে লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার হত্যা, হামলা ও হুমকির মতো ঘটনাও নজরকারে বিশ্বদরবারের।
বছর জুড়ে ঘটতে থাকা একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ঢাকা পড়ে আরেকটি ঘটনা।
তবে পুরোনো বছরের তীক্ত অভিজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে নতুনের শুভ বার্তায় শুরু হোক নতুনের আবহন।