উখিয়ায় জাতীয়করণকৃত রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরী নিয়ে জঠিলতা কাটছে না। জাতীয়করণের তিন বৎসরের মধ্যে যোগ্যতাবিহীন শিক্ষকদের যথাযথ যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ প্রদান করার পরও অনেক শিক্ষক তা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় অধিগ্রহণ বা জাতীয়করনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী উখিয়ায় অন্তত ২৮জন শিক্ষকের চাকুরী অবসান হয়েছে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস প্রজ্ঞাপন গোপন করে যোগ্যতা বিহীন শিক্ষকদের টাইম স্কেল, ইনক্রিমেন্ট, ইবি ক্রসের মাধ্যমে বকেয়া বিল সহ প্রদান করার সরকারের বিপুল পরিমানের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ২০১৩ সালের ৩১ জুলাইয়ের প্রচারিত এস.আর ও ২৭২ আইন/২০১৩ নং প্রজ্ঞাপনে এবং ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত বাংলাদেশ গেজেটের এস.আর ও ৩১৫ আইন/২০১৩ এর প্রজ্ঞাপনে কোন শিক্ষক বিধি ৪এর উপ-বিধি (১) এর খ দফার সেকশন- ৩এর উপ-সেকশন (১) এর অধীন জাতীয়করণকৃত সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের অধিগ্রহণের তারিখ অর্থাৎ ১ জানুয়ারী ২০১৩ তারিখ হইতে পরবর্তী তিন বৎসর অর্থাৎ ৩১ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের মধ্যে উক্ত যোগ্যতা অর্জনের স্বার্থে নিয়োগ প্রদান করিয়া প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করিবে। উক্ত গেজেটে বিধি-২এর (ঙ) উপবিধি অনুসারে বা “নিয়োগ বিধি” অর্থ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯১ অনুসরন যোগ্য বলে উল্লেখ রয়েছে।
উক্ত নিয়োগ বিধি মালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক পুরুষদের ক্ষেত্রে এইচ.এস.সি সহ সি.এন.এড এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ সহ মাধ্যমিক বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা আছে। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর অনেক শিক্ষকের প্রযোজ্য যোগ্যতা না থাকায় সরকার উক্ত শিক্ষকদের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাইভেট ভাবে যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক যোগ্যতা অর্জন না করেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের সাথে যোগসাজশ করে গেজেট ও প্রজ্ঞাপন আমলে না নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে টাইম স্কেল, ইবিক্রস, ইনক্রিমেন্ট সহ যাবতীয় উন্নীত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। উখিয়ায় এধরনের শিক্ষকের সংখ্যা ২৮ জনের মত বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে এসব খাতে গত তিন বছরে সরকারের বিপুল পরিমানের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক জানান।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, অধিগ্রহণের পূর্বেও রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকদের চাকুরী বা যোগ্যতার ব্যাপারে শিক্ষা অফিস তেমন কোন তথ্য সংগ্রহ করেনি। অনেক শিক্ষক চাকুরী বিধিমালা লংঘন করে সরকারী বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেখে নিয়মিত ছাত্র হিসাবে স্ব স্ব উপজেলা বা জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক, ¯œাতক বা সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তা সার্ভিস বুকে দুর্নীতি মাধ্যমে লিপিবব্ধ করে। উক্ত অনিয়মের ফলে উন্নীত স্কেলের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষক যা বেআইন এবং দুর্ণীতির সামিল বলে সংশ্লিষ্ঠ নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এসব ব্যাপারি অধিগ্রহণকৃত অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে শিক্ষক নেতা ছৈয়দ হোছাইন বলেন, কক্সবাজার জেলা সহ সারা দেশের প্রায় উপজেলা শিক্ষা অফিস অধিগ্রহণকৃত শিক্ষকদের উল্লেখিত সুবিধা দিয়ে আসছে। আমরাও সেভাবে এখান থেকে সুবিধা ভোগ করছি। এসব শিক্ষকদের অভিযোগ সারা দেশে অধিগ্রহণকৃত শিক্ষকদের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলেও উখিয়া শিক্ষা অফিস তা না দিয়ে শিক্ষকদের হয়রানি করছে।
এব্যাপারে উখিয়া শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শামীম ভূঞা বলেন, উখিয়ায় জাতীয়করণকৃত ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৮জন শিক্ষকের মধ্যে ২৭/২৮ জন শিক্ষক সরকারী গেজেট অনুসরন করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন সনদ দাখিল করতে পারে নি। গেজেটের ৮নং বিধি মতে বর্ণিত সময় সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হলে নিয়োগের ৩বছর পূর্তি তারিখ অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ইং তারিখে ঐসব শিক্ষকদের চাকুরী স্বয়ংক্রিয় ভাবে অবসান হয়ে গেছে। উল্লেখিত শিক্ষকদের বাদ রেখে অন্যান্য শিক্ষকদের চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের বেতন বিল করা হয়েছে। এব্যাপারে শিক্ষা অফিসে কোন অনিয়ম নেই এবং কোন শিক্ষক পাওনার অতিরিক্ত নিয়ে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ফেরত দিতে বাধ্য বলে তিনি জানান।