ডিবিসি ডেস্ক :
করোনার ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক তৈরি না হওয়ায় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই লকডাউন বা কারফিউ জারি করা হয়েছে। এরফলে কিছুটা করোনার প্রতিরোধ করা গেলেও অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। বিশেষ করে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় করোনার মধ্যেও কিছু কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করেছে।
করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহানের পরিবেশ ইতিমধ্যে স্বাভাবিক হয়েছে। চীনের পর করোনার ভয়াল থাবা আঘাত হাতে ইউরোপ-জুড়ে। যার মধ্যে স্পেন, ইতালি, বেলজিয়ামসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেও গত কয়েকদিন আগে স্পেন ও ডেনমার্কসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে লকডাউন শিথিল করেছে।
বাংলাদেশে করোনার থাবা দেরিতে শুরু হলেও গত ২৫ মার্চ থেকে দুই দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেই সঙ্গে যেসব জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সেই সব জেলা লকডাউন ঘোষণা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এমন পরিস্থিতি সোমবার ( ২০ এপ্রিল) কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন রমজানে সবকিছু বন্ধ রাখা যাবেনা। সীমিত আকারে ইন্ডাস্ট্রি চালু করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু কিছু গার্মেন্ট কারখানার পণ্য রফতানির জন্য খোলা রাখতে হবে। এটাও ঠিক সামনে রোজা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারবো না। আস্তে আস্তে কিছু কিছু জায়গায় উন্মুক্ত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করার পরার্মশ দেন।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল রফতানিমুখী অনেক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলবে বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকদের আসার জন্য পর্যাপ্ত বাস চেয়েছেন তিনি।
লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে গাজীপুর জেলা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, ‘যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। চাকরি টিকিয়ে রাখতে মেয়েরা একহাতে কোলের বাচ্চা নিয়ে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে আসছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিক আসায় গাজীপুর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে এমনটা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রথমদিকে গাজীপুরের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে আমরা অনেক ভালো রেখেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার পর শ্রমিকরা আসতে শুরু করলো তখন নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলো। আমাদের জেলাটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আবার যদি শ্রমিকরা এভাবে আসা-যাওয়া করেন তাহলে বেগ পেতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে যারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন তাদের নিরাপদ রাখতে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। আর গাজীপুরে অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছেন। তাদের ঘরে রাখতে হলে অবশ্যই ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।’
গার্মেন্ট শিল্প চালু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্য যে কিছু কিছু শিল্প আছে যাদের পণ্য রফতানি হবে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য আছে কিছু কিছু খোলা রাখা। আর কিছু কিছু চালু করতেই হবে। বিশেষ করে আমাদের ওষুধ শিল্প, অ্যাপ্রোন থেকে শুরু করে, হেড ক্যাপ, সু ক্যাপ এগুলো যারা তৈরি করছে তাদের জন্য খোলা রাখতেই হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যেসব মালিকেরা কারখানা খুলতে চান, তারা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কীভাবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবেন তা আলোচনা করে ঠিক করতে পারেন। কারখানার মধ্যে কোনও ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে যদি তাদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়। যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা যেখানে আছে তারাও সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে পারে।
গাজীপুরে করোনা প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গাজীপুরে এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা খুব বেশি দেখা দিচ্ছে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে ২৪ বা ২৫ তারিখে চালু করা ঠিক হবে কিনা। এটা বুঝে নিয়েই শিল্প খোলার কথা বা সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তবে বলবো না যে একদম বন্ধ থাকুক সীমিত আকারে সেই পরিমাণ শ্রমিক আসতে হবে। তারা সেভাবে চালু করতে পারবে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এটা ঠিক করতে হবে।’
আগেরবার হঠাৎ করে শ্রমিক আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার হঠাৎ সুপারভাইজারদের দিয়ে শ্রমিকদের দিকে নিয়ে আসলো। পরের দিনই বলেছিল চলে যাও- এটা হয়নি। এই আসা-যাওয়ায় শ্রমিকরা যে কষ্টটা পেয়েছে। যোগাযোগের সব বন্ধ, মাইলের পর মাইল হেঁটে হেঁটে এই মেয়েরা পৌঁছাইছে। এভাবে যেন আর তাদের বিড়ম্বনায় না পড়তে হয়।’