রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা বুদ্ধের মূর্তিকে স্নান করানোর মাধ্যমে শুরু করেছিলো তাদের ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ ১৩৭৮ রাখাইন সনকে বরণ আনুষ্ঠানিকতা।আজ ৩ দিনব্যাপি অনুষ্ঠান মালার সফল সমাপ্তি হয়েছে।
রাখাইনদের এ উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যাথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পযর্টন শহর কক্সবাজারে শেষ হয়েছে রাখাইনদের সামাজিক উৎসব সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলী উৎসব। উৎসবের শেষ দিন মঙ্গলবার শহরের রাখাইন পল্লীগুলোতে ছিল রাখাইন তরুন-তরুনীদের প্রাণের মেলা। নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা বরণ করে নিল রাখাইন নববর্ষকে। আর বিদায় জানালো পুরনো আরো একটি বছরকে। জলকেলী উৎসবের শেষ দিনে সবার মনে ছিল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সম্প্রীতির বাঁধনে জড়িয়ে সকল মানুষরা যাতে এক হৃদয়ে থাকতে পারে। শুরু রাখাইন নয়, জলকেলী উৎসবের আনন্দে ভেসেছে হিন্দু-মুসলিম ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের নর-নারীরাও। বাঁধভাঙ্গা আনন্দের এ জোয়ারের সামিল হয়েছিল দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটকও। সবমিলিয়ে জলকেলী উৎসবকে সার্বজনীন রুপ দিতে শহরের রাখাইন পল্লীগুলোতে বসেছিল নানা ধর্ম, পেশা ও বর্ণের মানুষের মিলন মেলা।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইনদের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব সাংগ্রেং পোয়ে বা নববর্ষ উৎসবের জলকেলী উৎসবের শেষ দিনে ১৯ এপ্রিল সকাল থেকে শহরের রাখাইন পল্লীতে স্থাপিত জলকেলী প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে হাজির হতে থাকে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল বয়সের নর-নারীরা। দলবদ্ধ ভাবে নতুন পোষাক পরিহিত হয়ে সবাই হাজির হয় পানি ছিটানোর সেই আনন্দ স্থানে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইনদের নববর্ষ উৎসব তথা জলকেলী উৎসব প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ও জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হলো। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আয়োজনের মাত্রাটা ছিল বেশী। আর এ উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যাথা-বেদনা, গ্লানি ভূলে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য-কক্সবাজারের চেয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য বা রাখাইন এস্টেটে আরো জাঁকজমকের সাথে পালিত হয় উৎসবটি। এ উপলক্ষে রাখাইন তরুনী, বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রীরা চন্দন ও ছেনেখা (এক প্রকার সুগন্ধি গাছ) কাঠ ঘষে সুগন্ধি পানি তৈরির কাজ করে থাকে।
তরুণ-তরুনীসহ রাখাইন সম্প্রদায় একে অপরের গায়ে ‘পবিত্রতার প্রতীক’ পানি ছিটিয়ে আজ নিজেদের শুদ্ধ করে নিয়েছেন বলে উক্ত সম্প্রদায়ে দাবী। পুরোনো দিনের সকল গ্লানি ও সকল জরা-জীর্ণতাকে ধুয়ে-মুছে প্রাণভরে বরণ করছেন নতুন বছরকে।
প্রসংগত, রাখাইন বা মগী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিদায় নিয়েছে রাখাইন পুরনো বছর ১৩৭৭। ১৫ এপ্রিল শুক্রবার শুরু হয় ১৩৭৮ মগী সন। একই ক্যালেন্ডার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারেও অনুসরণ করা হয়। সেখানেও এ ক্যালেন্ডারকে বার্মিজ ক্যালেন্ডার বলা হয়ে থাকে।