ইয়াবার কালো হাত এখন গ্রাস করে ফেলছে কক্সবাজারের রাজনীতি। মাদক ব্যবসা ছাড়াও খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতায় জড়িত পেশাধার অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে রাজনীতি। আর রাজনীতির আড়ালেই চলছে অপরাধ তৎপরতা। গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজার শহরের এক কৃষকলীগ নেতা ১০ লাখ পিস ইয়াবাসহ এবং টেকনাফের এক যুবদল নেতা ৮৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ঘটনায় বিষয়টি রাজনীতিতে অপরাধীর ছায়া আরো স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী দল আওয়ামীলীগ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা শাখা ক্রমশ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এর ফলে সৎ ও পেশাদার রাজনীতিবিদরা আস্তে আস্তে রাজনীতির মাঠে ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছে। অনেকে ইয়াবা ব্যবসার প্রতিবাদ করতে গিয়েও এলাকা ছাড়া হয়েছে। ইয়াবা ছাড়াও অন্যান্য মাদকের ব্যবসা, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতায় জড়িত পেশাধার অপরাধীরা আইনী ধরাছোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে রাজনীতির ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়ছে অপরাধীদের হাতে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও ইমেজ সংকটে পড়ে ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ১০ লাখ পিস ইয়াবা ও ৭ সহযোগীসহ কক্সবাজার শহর কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন র্যাবের হাতে ধরা পড়ার দুইদিন পর ৮৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে আটক হন টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৈয়বউল্লাহ। পরে দল থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। এরআগে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ সরকারী দলের বিভিন্ন সংগঠনের ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মৌলভী, ভান্তে ও সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ ধরা পড়েন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। মাদক ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আসার ঘটনা রাজনীতির জন্য চরম অভিশাপস্বরূপ বলে মনে করছেন সৎ রাজনীতিবিদরা।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও অতিরিক্ত পিপি ফরিদুল আলম বলেন- কালো টাকার প্রভাবে রাজনীতি কলূষিত হয়ে পড়ছে। রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়ছে অপরাধীদের কাছে । এটা রাজনীতির জন্য অশনী সংকেত।
এসব কারণে রাজনীতিবিদদের উপর জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে দেশের নেতৃত্ব থাকে। কিন্তু তারা নিজেরাই যদি অপরাধ করে বেড়ায়, তাহলে দেশের অবস্থা কী হবে ?
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বলেন- ‘সরকারী দলে জড়িত থাকলেও কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। শেখ হাসিনার এ নির্দেশ অনুযায়ী দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও কোন অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী বলেন- ‘বিএনপি ইয়াবা ব্যবসাকে চরম ঘৃণা করে। দলের সাথে জড়িত কারো বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাথে সাথে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইয়াবাসহ আটক টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৈয়বউল্লাহকেও শুক্রবার বহিষ্কার করে তার দলের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।