কক্সবাজার রিপোর্ট : দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনীর আরেকটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
কক্সবাজারের রামুতে বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর নবগঠিত দশম পদাতিক ডিভিশনের ২ পদাতিক ব্রিগেডসহ সাতটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেনাসদস্যদের উদ্দেশ করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃশত্রুর হুমকি মোকাবিলায় আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও নৈপুণ্য বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম এ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষায় লেবুখালীতে আরও একটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অধিকতর যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের সম্পদ, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে পেশাগতভাবে আপনাদের আরও দক্ষ ও কল্যাণমুখী হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দশম পদাতিক ডিভিশনের গঠন সম্পূর্ণ করতে আজ এই ডিভিশনে দুটি পদাতিক ব্রিগেডসহ সাতটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের প্রত্যেক সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন।’
দিনটিকে ‘অত্যন্ত আনন্দ ও পরিপূর্ণতার’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক বছর আগে আমি যখন দশম পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন করি, সে সময় এখানে প্রয়োজনীয় কোনো স্থাপনা ছিল না। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই নবগঠিত গ্যারিসনের যে সম্পূর্ণ রূপ আমি দেখলাম, তা আমাকে আশ্বস্ত করেছে।’
দশম পদাতিক ডিভিশনের উন্নয়নে এর সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সেনাসদস্যরা পেশাদারির মাধ্যমে এ ডিভিশনকে অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় ডিভিশনে পরিণত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন।
পার্বত্য চুক্তি এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ইস্যুতে বিজয় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রসম্পদ রক্ষা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার রামুতে সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেছে। এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার ফলে অবকাঠামোসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানের আগে প্রধানমন্ত্রী রামু সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ও দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী দশম পদাতিক ডিভিশনের নির্মিত বীর সরণি, অজেয় স্মৃতিফলক, বীরাঙ্গন বহুমুখী শেড ও আলীকদম সেনানিবাসে মাতামুহুরী নামে একটি কম্পোজিট ব্যারাকও উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অঙ্গীকার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন জোরদার এবং পর্যটন নগরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়নে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল রামুতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, তাঁর সরকার কক্সবাজার জেলার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মহেশখালীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা, ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলযোগাযোগ স্থাপন ও জেলার অন্যান্য এলাকার সঙ্গে মহেশখালীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সেতু নির্মাণের সমীক্ষাসহ বিভিন্ন চলমান প্রকল্প ও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।