রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নে স্কুল শিক্ষককে গুলি করে হত্যা : আটক ১
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৬
৪৮২
বার পড়া হয়েছে
রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক স্কুল শিক্ষক নিহত হয়েছেন। নিহত মোহাম্মদ নুরুচছাফা (৩০) ঈদগড় বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া দুইটায় ঈদগড় ইউনিয়নের মোহাম্মদ শরীফপাড়ায় শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত নুরুচ্ছাফার ছোট ভাই মোহাম্মদ নুরুন্নবী (২৭) পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী, উখিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মো. আবদুল মালেক মিয়া ঘটনাস্থলে যান।
নিহত নুরুচ্ছাফার পিতা আবদুল মাবুদ জানিয়েছেন, একদল অজ্ঞাত সন্ত্রাসী বাড়িতে প্রবেশ করে তার দুই ছেলেকে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান বড় ছেলে মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা। গুলিবিদ্ধ হলে অপর ছেলে মোহাম্মদ
নুরুন্নবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা কেবল তাঁর দুই ছেলেকে গুলি করে পালিয়েছে। বাড়ি থেকে কোন মালামাল লুট করেনি। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের সাথে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এরই জের ধরে ডাকাতবেশে সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
পরিবারের সদস্যরা আরো জানান, রাত দুইটার দিকে একদল অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী রান্না ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বারান্দায় থাকা বৃদ্ধ পিতা আবদুল মাবুদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। আরো ৩জন অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী শিক্ষক নুরুচ্ছাফার কক্ষে প্রবেশ করে গুলি করার চেষ্টা চালায়। এসময় নুরুচ্ছাফার স্ত্রী ৮ মাসের শিশু কোলে নিয়ে সন্ত্রাসীদের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা স্ত্রীর কথায় কর্ণপাত না করে নুরুচ্ছাফার বুকে গুলি ছোড়ে। এসময় অন্য কক্ষে থাকা নুরুচ্ছাফার ছোট ভাই নুরুন্নবীকেও সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যায়।
এদিকে রাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই নজরুল। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। নিহত মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফার মৃতদেহ পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল মজিদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল থেকে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। সে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বাইশারী ইউনিয়নের মোকতার আহমদের ছেলে। তাকে জিজ্ঞাষাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে চারটায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রামু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছালামত উল্লাহ, ঈদগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টো, ঈদগড় সিকদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুদ্দোজা, বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ, সহকারি শিক্ষক আকতার আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া জানায়ায় সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিমগীর হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তুরের জনতা অংশ নেন। জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নিহত স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা দুই বছর পূর্বে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাঁর সংসারে আট মাসের সন্তান রয়েছে। নুরুচ্ছাফার পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিহত নুরুচ্ছাফার পরিবারের সাথে ওই এলাকার পশু চিকিৎসক মহিউদ্দিনের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এরই জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হতে পারে। নিহতের পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসি বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে বর্বরোচিত এ ঘটনায় এলাকায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। উপজেলার শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।