গঠনতন্ত্র মতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তিন বছর পর পর। যা ‘ত্রিবার্ষিক সম্মেলন’ নামে পরিচিত। কিন্তু কক্সবাজারের রামু উপজেলার যুবলীগের তিন বছরের কমিটির মেয়াদ ষোল বছরেও শেষ হয়নি। আদৌ সম্মেলন হবে কিনা তাও বলতে পারছেন না নতুন নেতৃত্বে আসতে চাওয়া সাবেক ছাত্রনেতারা। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলায় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না বলেও দাবি তাদের। তবে জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি মাসে জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চুড়ান্ত অনুমোদন হলেই রামুসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ উপজেলা কমিটির সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। জানা যায়, ২০০২ সালের শেষের দিকে রামু উপজেলা যুবলীগের সে সময়ের আহবায়ক শামসুল আলম মন্ডল আহবায়কের পদ ছেড়ে দিলে জেলা যুবলীগ রিয়াজুল আলমকে (পরবর্তীতে রামু উপজেলা চেয়ারম্যান) সভাপতি এবং সাংবাদিক নিতিশ বডুয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই জনের কমিটি ঘোষণা করে জেলা যুবলীগ। যা, ২০০৩ সালের ১ জুন রামু উপজেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন সে সময়ের সভাপতি (বর্তমান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক) খোরশেদ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক) এ্যাডভোকেট রণজিত দাশ । সে সময়ের অনুমোদিত কমিটির মেয়াদ ১৬ বছর পার হয়েছে। অথচ এরই মধ্যে জেলা যুবলীগ কমিটির সম্মেলন হয়েছে দুই দুইবার। রামু উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক শামসুল আলম মন্ডল জানান, আমি রামু উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের এক সিদ্ধান্তক্রমে সেদিন আমি রামু যুবলীগের আহবায়কের পদ ছেড়ে দিলে রিয়াজুল আলম ও নিতিশ বড়–য়াকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সভাপতি সম্পাদক হওয়ার ষোল বছর পরও তারা যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে পারেনি। বরং মাইম্যান সৃষ্টি করতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বারবার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে কয়েকদপা তারিখ ঘোষনার পরও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন রামু উপজেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক। ফলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেনি রামুতে। তাই দ্রæত সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বর্তমান কমিটি রামু উপজেলার আওতাধীন কোন ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি তারা। কয়েকটি ইউনিয়নে নিজেদের প্রছন্দের লোকজন দিয়ে কমিটি ঘোষনা করেছেন। ঘোষিত কমিটির নেতারা এদিকে থেকে ওদিক হলেই আবার ভেঙ্গে দেন। বর্তমান সাংসদের আজ্ঞাবহ কমিটি বলে দাবি করেছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বলতে গেলে সাংসদের নির্দেশক্রমে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছার উপর চলে রামু উপজেলা যুবলীগ। এতে যুবলীগের আদর্শীক কর্মীর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি তাদের। কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক দুইবারের সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, ২০০৩ সালে রামু উপজেলা যুবলীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলাম। সে সময় আমি সভাপতি ও এ্যাডভোকেট রণজিদ দাশ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৬ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে আমি জেলা যুবলীগের পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হই। সর্বশেষ ২০১৮ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুনদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছি। জেলা সম্মেলনের আগে রামু উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করতে কয়েকদপা তারিখ দেয়া হলেও তারা করেনি। একটি সংগঠনের দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে না বলে জানান সাবেক এ নেতা। রামু উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নিতিশ বড়ুয়া বলেন, আমরা রামুতে যুবলীগকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়েছি বলেই যুবলীগ আরো সু-সংগঠিত হয়েছে। রামুতে যুবলীগের সুনাম রয়েছে, কোথাও কোন দুর্নাম নেই। জেলার পক্ষ থেকে গত ষোল বছরে উপজেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনের জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিলাম। এখনো আমরা সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুত আছি। যখন তারিখ ঘোষণা করা হবে তখনই সম্মেলন করা হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে ষোল বছরেও উপজেলা কমিটির সম্মেলন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। তারা যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারা মতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির দ্রæত সম্মেলন দাবি করেছেন। গঠনতন্ত্রের উক্ত ধারায় বলা হয়েছে ‘সংগঠনের কর্মকর্তা নির্বাচন সকল স্তরে ত্রি-বার্ষিক সভায় অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় ত্রি-বার্ষিক সভা জাতীয় কংগ্রেস এবং অন্যান্য স্তরে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন নামে অভিহিত হবে’। কক্সবাজার জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল বলেন, জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ সব উপজেলার সম্মেলন করা হবে। যুবলীগ সভাপতি সোহলে আহমদ বাহদুর বলেন, আমিও জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা ছিলাম। আমার জানা মতে, রামু কমিটিকে কয়েকদপা সম্মেলনের তারিখ দেয়া হয়েছিলো। আমাদের জেলা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলেই কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষে গঠনতন্ত্র মতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
One thought on "রামু উপজেলা যুবলীগ : ১৬ বছরেও মেয়াদ শেষ হয়নি তিন বছরের কমিটি"
Comments are closed.