ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে।
সোমবার (০৯ মে) রাত পৌনে নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে রায়টি পড়ে শোনানো হয় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। কারা সূত্র জানিয়েছে, তার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন।
সূত্র জানায়, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম হায়দার, জেল সুপার নেসার আলম এবং দুইজন ডেপুটি জেল সুপার কনডেম সেলে গিয়ে রায় পড়ে শোনান। পরে জাহাঙ্গীর কবির ও গোলাম হায়দার অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে কারাগার থেকে বের হন।
এর আগে কারা চিকিৎসক ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ও ডা. আহসান হাবি নিজামীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তিনি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে কারা সূত্র।
রাত সাতটায় রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি কারাগারে পৌঁছানোর পর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর এই সর্বোচ্চ নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। লাল ফাইলে মোড়ানো রায়টি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করেন বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্মকর্তারা। এরপর পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে নিজেরা রায় পড়ে পর্যালোচনা করেন কারা কর্মকর্তারা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হচ্ছে নিজামীকে। রায় কার্যকরের লক্ষ্যে রোববার (০৮ মে) রাত ১২টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এনে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে নিজামীকে।
তবে ফাঁসির দড়ি এড়াতে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন নিজামী। এখন নিজামীর কাছে কারা কর্মকর্তারা জানতে চাইবেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে শুরু হবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া।
আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। তার আগে শেষবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করবেন নিজামীর স্বজনেরা।
ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগার ছাড়াও রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। একইসঙ্গে রায়টি পাঠানো হয় ঢাকার জেলা প্রশাসকের (ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট) কাছে। সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দেবে কারা কর্তৃপক্ষকে। লিখিত ওই চিঠি পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে নিজামীকে।
নিজামীর করা রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে গত বৃহস্পতিবার (০৫ মে) এ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আর সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটায় প্রকাশিত হয় ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়।