জুনের ২৩ তারিখ ফেডের জেনারেল কাউন্সেল টমাস ব্যাক্সটার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেনারেল কাউন্সেল এলমোর ও কাপুলেকে এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানান বলে রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়।
চিঠিতে ব্যাক্সটার চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা করতে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘সব ধরনের কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক যে প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অর্থ স্থানান্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রিজল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল, অথচ তাদের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ সরানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে ব্যাক্সটারের চিঠিতে বলা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়।
এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
রিজল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলার এক ক্যাসিনো মালিক ফিলিপিন্স সরকারের হাতে ফেরত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ওই টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা কার ‘অদক্ষতা’য় চুরি গেছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউ ইয়র্ক ফেড ও সুইফটের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে।
ওই ঘটনার তদন্ত করা মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ার আইয়ের একটি প্রতিবেদনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক ফেডকে দিতে রাজি হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, ওই প্রতিবেদন পেতে কয়েক সপ্তাহ ধরে ‘দেনদরবার’ করছিল নিউ ইয়র্ক ফেড। মার্চে ফায়ার আইয়ের দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে রিজার্ভ চুরির জন্য তৃতীয় একটি পক্ষকে দায়ী করা হয়েছিল।
ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া চিঠি এবং ফায়ার আইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের কেউ মন্তব্য করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহাও এ বিষয়ে কথা বলেননি রয়টার্সের সঙ্গে।
ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তদন্তাধীন কোনো বিষয় নিয়ে তারা কোনো ধরনের মন্তব্য করবে না।
আর রিজল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, রিজার্ভ চুরির টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংককে সব ধরনের সহযোগিতা তারা করবে।
চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আগামী সপ্তাহে ম্যানিলা যাচ্ছেন বলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভ চুরির তদন্ত কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
ফিলিপিন্স সরকার রিজল ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তাদের আটক করে টাকা উদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অবশ্য রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সিজার ভিরাতা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিৎ যারা অর্থ ছাড়ের ভুয়া মেসেজ পাঠিয়েছিল, তাদের খুঁজে বের করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও নিউ ইয়র্ক ফেডের মধ্যে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ বৈঠক হবে।
টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে ওই সভায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিউ ইয়র্ক ফেডের সঙ্গে চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছে কী না- সে বিষয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে ফেডারেল রিজার্ভের এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।