আগামী ১৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে চায় সরকার। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে অন্তত ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে তা শিল্পায়নের মাধ্যমেই সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। দেশকে শিল্পায়নে এগিয়ে নিতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। আগামী রোববার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতাধীন দেশের ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উদ্বোধন করবেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ও শিল্প ইউনিটগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নকাজের গতিশীলতা বাড়াতে চায়। এ ক্ষেত্রে শিল্পায়নের বড় উপকরণ গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গতিশীলতা চায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায়। ফলে পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেজার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে। রোববার যে দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় সাবরাং ট্যুরিজম এসইজেড, মৌলভীবাজার শেরপুরে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের মংলা অঞ্চলের কামাডাংলা এলাকায় মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, নরসিংদী জেলার পলাশে কাজীরচর এলাকায় একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় মেঘনা ইকোনমিক জোন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর ছোট শিলামান্ডী এলাকায় মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জোন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ বড়তিলক সোনাময়ী এলাকায় আমান ইকোনমিক জোন, গাজীপুরের কোচাকুড়ি এলাকায় বে ইকোনমিক জোন।
সরকার ভবিষ্যতে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা। বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী গত বছর এক বৈঠকে ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দিয়েছেন। অনুমোদিত ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইকোনমিক জোনের মধ্যে ৩টি বেসরকারি ইকোনমিক জোন রয়েছে। এছাড়া গত বছরের এক বৈঠকে ‘প্রাথমিক স্থান নির্বাচন’ কমিটির সভায় আরও ৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্বাচন করা হয়েছে। অর্থাৎ বেজা বর্তমানে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেজা দ্রুত অনুমোদিত ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। ফলে শিল্পায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করে যাচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক জোনে অফ-সাইড ইনফ্রাস্ট্র্রাকচার এবং পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করবে।
এদিকে এসব অর্থনৈতিক জোন স্থাপনে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে জ্বালানি সংকট। বিশেষ করে গ্যাসের সংকটের কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে সরকারের দেশব্যাপী অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের প্রক্রিয়া। গ্যাসের সংকট থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা দেশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবে না। দেশে বর্তমানে তিন হাজার থেকে ৩২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ২৩-২৪শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে ঘাটতি প্রায় ৭শ মিলিয়ন ঘনফুট। দিন দিন এ ঘাটতি বাড়ছে। ফলে বিকল্প জ্বালানি সন্ধান না করলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে সরকারের ইকোনমিক জোন তৈরির পরিকল্পনা ও মধ্য আয়ের দেশ পর্যায়ক্রমে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন।