টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দিন দিন সক্রিয় হয়ে উঠছে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এসব গ্রুপ আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রতিনিয়িত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনিরাপদ বোধ করছে নিরীহরা। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয়দের মাঝেও।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনুস আরমান বলেন, নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে প্রতি রাতে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ক্যাম্পের ভেতরে অস্ত্রের মহড়া দেয়। ক্যাম্পের আশপাশের জঙ্গলে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের। তারা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধ ছড়াচ্ছে। প্রতি রাতেই ক্যাম্পে গোলাগুলি, হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকে রোহিঙ্গা মাঝিরা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
ইউনুস আরমান আরো বলেন, রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিমের অনুসারীরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করছে। রোহিঙ্গা যুবকদের নিয়ে অপরাধের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন হাকিম ডাকাত।
ইউনুস আরমানের দাবি, সর্বশেষ যারা এসেছে, তাদের সঙ্গেই সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে৷ যারা আগে থেকেই রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে আছে, তারা এর সঙ্গে জড়িত নয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা নুর মোহাম্মদ শিকদার বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার কারণে ক্যাম্পে অসংখ্য সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের কারণে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এসব সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। নইলে এ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই দেশে প্রতিনিয়ত ইয়াবার চোরাচালান, চুরি, ডাকাতি, খুনসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বানচাল করা।
উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রতা থাকা স্বাভাবিক। কারণ, তারা নির্যাতিত হয়েছে। চোখের সামনে স্বজনদের মরতে দেখেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তায় টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩২ জন নিহত। ৩১২টি মামলায় ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কক্সবাজারের এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বলেন, নানা কারণে রোহিঙ্গারা সহিংস হয়ে উঠছে। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বাজার গড়ে উঠছে। এগুলোর ভাড়া ও চাঁদা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।