লামা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের জন্য রয়েছে ৮ জন ডাক্তার, ৪ জন উপ সহকারী মেডিক্যাল অফিসার। এর মধ্যে ইউএইচএফও ট্রেনিং কিংবা প্রশাসনিক কাজে উপস্থিত থাকেন প্রায়ই।
রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বহু ওষুধ বিতরণ না করে মেয়াদ-উত্তীর্ণ করে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নিরাপদ মাতৃত্বের কোন ব্যবস্থাও নেই এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ফলে প্রতিনিয়ত জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চরম ঝুঁকি অতিক্রম করছেন বহু প্রসূতি মা।
সম্প্রতি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইউনছু সপ্তাহে তিনদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় সংকট কিছুটা নিরসন হলেও ডাক্তার প্রয়োজন আরো।
কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক মানসিকতার ফলে দুটি অ্যাম্বুলেন্সসহ হাসপাতালে কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা যন্ত্রগুলো অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালে আয়ারা রোগীদেরকে ইনজেকশন পুস, কাটা-ছেঁড়া সেলাই করাসহ গাইনি বিভাগের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
লামা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের মিলে তিন লক্ষাধিক মানুষের সরকারি একমাত্র সেবা কেন্দ্র লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
লামা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান ডা. মো. ছৈয়দ আহমেদ জানান, ডাক্তার সংকট ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি সত্য। সরকার যথেষ্ট ওষুধ বরাদ্দ দিচ্ছে, এক্ষেত্রে সংকট নেই। সিসিসমূহে জনগোষ্ঠীর সেবার মান সুনিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার।
তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৮০’র দশকে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট লামা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে ৫০ শয্যা মানের বিল্ডিং অবকাঠামো উন্নয়ন করেন। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তারা এটিকে ৫০ শয্যা ঘোষণা করেন। ঘোষণার তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। কোন ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি এখনো দেওয়া হয়নি।
এছাড়া ইউনিয়ন সিসিগুলোতেও একই সংকট বিরাজ করার অভিযোগ করে চলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ওই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত ভিজিটর ও স্বাস্থ কর্মীরা নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠি।
সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিএইচডি কর্তৃক অনুষ্ঠিত দুর্গম এলাকার মা ও শিশুদের পুষ্টি সেবা সংক্রান্ত অ্যাডভোকেসি সভায় এসব তথ্য প্রকাশ পায়। তথ্যমতে এখনো উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি কয়েকটি পল্লীতে মা ও শিশুমৃত্যুর শতভাগ ঝুঁকি রয়েছে। সড়ক বা নদীপথে আপদকালীন দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে সেসব মানুষ।