২০১৬ সালে এই লেখা লেখার সময় সেলফি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বয়ে যাচ্ছে আলোচনা আর সমালোচনার বিরাট ঝড়। সেলফিকে মানসিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মনোচিকিৎসকরা। অনেকেই আবার ইতিবাচক অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছেন সেলফি তোলার মধ্যে।
‘সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু’_ এমন সংবাদ শিরোনাম আর নতুন কিছু নয়। আমেরিকায় বিগত বছর হাঙরের আক্রমণে যতজন মারা গেছেন তার দ্বিগুণ সংখ্যক মারা গেছেন সেলফি তুলতে গিয়ে। আর গত দুই বছরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ৪৯ জন। সেলফির কারণে মারা যাওয়াদের বেশিরভাগেরই বয়স ২১ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ছাদ বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে মারা গেছেন ১৬ জন। পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১৪ জন। রেলের নিচে পড়ে মারা গেছেন আটজন। এ ছাড়া অন্যভাবে মারা গেছেন আরও ১১ জন।
সেলফি তোলার উন্মাদনায় ‘সেলফিটিস’ নামের এক ধরনের রোগের কথাও বলছেন গবেষকরা। তিন স্তরের এই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবেন নাকি সেলফি তোলা নিয়ে একটু ভাববেন_ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি সবার আগে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সেলফি তোলার মাধ্যমে ব্যক্তি আত্মমগ্নতার মধ্যে ডুবে পড়ে। এভাবে মানসিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে। সেলফির পক্ষেও কিন্তু রয়েছে বেশকিছু যুক্তি। সেলফি একজন মানুষকে আত্মসচেতন ও প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করে বলে মনে করেন একদল অস্ট্রেলীয় গবেষক। সেলফি স্মৃতি আর সময়কে ধরে রাখে, এমনটাও মনে করেন অনেকে।
কে না তুলছেন সেলফি_ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ফুটবল সেনসেশন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার, হলিউড-বলিউডের তারকারা_ কে না তুলছেন সেলফি। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে দেখা হলে কয়েক বছর আগে নেওয়া হতো তাদের অটোগ্রাফ আর এখন তোলা হয় সেলফি। সেলফিজ্বরে আক্রান্ত সবাই। সেলফি প্রসঙ্গে ফেসবুকে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কী মনে করেন সেলফি নিয়ে। বেশকিছু মজার ও প্রয়োজনীয় কমেন্টস করেছে এই বিষয়ে অনেকজন। ফেসবুকের উল্লেখযোগ্য মন্তব্যগুলো জেনে নেওয়া যাক এবার।
তাইয়ারার মতে, সেলফি তুলতে ওর ভালোই লাগে, স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। অন্যকে বলে বিব্রত হওয়ার চেয়ে নিজের ছবি নিজে তোলাই ভালো। অর্পা ভাবে, সেলফির সুবিধা হলো_ এখন বিউটিক্যাম দিয়ে নিজেকে সুন্দর দেখানো যায় সহজেই, ইচ্ছেমতো এডিট করা যায়। শতাব্দীর মতে, লিমিটেড সেলফি তোলা ভালোই লাগে। কিন্তু যারা সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছুতে সেলফি তুলতে থাকে তাতে মনে হয়, এদের কোনো সমস্যা আছে। আমি কাজ না পেলে, নিজেকে কখনও স্বাভাবিকের চেয়ে সুন্দর লাগলে তখন সেলফি তুলি। মুনের মতে, ‘আমি তুলি, ভালোই লাগে। তবে ফ্রিক না। যার যার পার্সোনাল ব্যাপার। কেউ তুললে আমার কোনো সমস্যা নেই।’ ফারহানা ভাবে, সেলফি তোলাটা আসলে ট্রেন্ড। মানুষ ট্রেন্ডে পড়ে তুলে, সেলফির কারণে নিজেকে দেখানোর প্রবণতা অনেক বেশি। অনিক লিখেছে, ‘সেলফি জোস একটা বিষয়, বিশেষ করে যখন বন্ধুদের সঙ্গে গেট টুগেদার হয়, তখন সেলফি তুলতে বেশি পছন্দ করি।’ সৌরভের মতে, সবসময় প্রফেশনাল ক্যামেরা নিয়ে ঘোরা সম্ভব নয়, সেলফি অনেকটাই পূরণ করে দেয়। তাসনিম বলে, সেলফি ফ্রিক কিছু মানুষ আছে যারা সবসময় সবখানে সেলফি তুলে তাদের দেখে, তাই আর সেলফি তুলতে ইচ্ছে করে না। ওয়াহেদ বলে, নিজেকে যেদিন বেশি ভালো লাগে সেদিনই সেলফি তুলি। এ ছাড়া সেলফি তুলতে ভালো লাগে না। রিয়া আর সেঁজুতি উভয়ই ভাবে, সেলফি তোলার সময় তাদের তুলনামূলক কম মোটা লাগে, তাই তাদের সেলফি তুলতে ভালো লাগে।
সেলফির পক্ষে আর বিপক্ষে হাজারো যুক্তি-তর্কের বুঝি শেষ নেই। তবে মাথায় রাখা উচিত, সেলফি যেন আপনার ক্ষতির কারণ এবং অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে না যায়। সাবধানতা ও নির্মল আনন্দের জন্যই যেন সেলফি ব্যবহার হয়। নতুবা নিজেকে দেখতে দেখতে গ্রিক দেবতা নার্সিসাস যেমন জলের অতলে হারিয়ে গিয়েছেন, তেমনি আপনিও বরণ করে নিতে পারেন নার্সিসাসের নিয়তি।