একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সংসদ সদস্যদের (এমপি) শপথ গ্রহণে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তবে তারা দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তারা জানিয়েছেন, শপথ নিতে তাদের উপর এলাকার মানুষ চাপ দিচ্ছে। এ অবস্থায় করণীয় জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব অপেক্ষা করতে বলেছেন।
বিজয়ী এমপিদের কেউ কেউ বলেছেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে তারা শপথ নিতে প্রস্তুত। অপরদিকে, দল যদি বলে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া যাবে না, তাহলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর কারো কারো কাছ থেকে সরাসরি পাওয়া যায়নি।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সারা দেশে বিএনপির ছয় প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এরা হলেন- বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মো. হারুন উর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া।
কিন্তু এই নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ ভোট চুরি নয়, ডাকাতি করেছে’, এমন অভিযোগ আনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।
এদিকে গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বাকি পাঁচ নির্বাচিত বৈঠক করেন। এসময় ফখরুল ও বাকি সদস্যদের মধ্যে শপথ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সবাই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। একই সাথে দলের মহাসচিবের কাছে শপথ নেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন নির্বাচিত বাকি পাঁচ সদস্যরা। তখন মির্জা ফখরুল তাদের আরও অপেক্ষা করতে বলেন। একই সাথে দলের হাই কমান্ড যে সিধান্ত নেয় সেই সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেন।
বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ মোশাররফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলে অফিসে বসেছিলাম, শুধু চা-চক্র। মহাসচিব বলেছেন, দলের সিদ্ধান্তে আমরা যা করব, সবাই এক সাথেই করব। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা ঠিক হবে না। আর আমরা সবাই বলেছি, যে দলের বাইরে আমরা কিছু করব না। হাই কমান্ড থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে তাই মেনে নেওয়া হবে। এর বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার প্রশ্নই আসে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মতামত, আমি বিএনপি করি বলেই সারা বাংলাদেশে বিএনপির ছয় জনের একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমার নেত্রী খালেদা জিয়া আজকে জেলে, একজন বয়স্ক মানুষ, এক ছেলে মারা গেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশ ছেড়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারা যদি এতো বড় ত্যাগ শিকার করতে পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না? দল যা বলবে, সেটাই করব; দলের বাইরে কিছু করব না।’’
ঠাকুরগাও-৩ আসনের নির্বাচিত সাংসদ জাহেদুর রহমান মনে করেন সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলা উচিৎ। বার্তা ২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘‘আমার এলাকার মানুষের চাপ রয়েছে, সে ব্যাপারে মহাসচিবকে জানিয়েছি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে, সংসদে গিয়ে আমাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য কথা বলা উচিৎ। আমরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিলে তো সরকারের পতন হয়ে যাবে না। তবে এখন পর্যন্ত দলের প্রতি আমরা আনুগত আছি, দলের বাইরে কোনো সিধান্ত নেব না আমরা।’’
খালেদা জিয়াকে মুক্তির বিনিময়ে বিএনপি সংসদে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এভাবে বা প্যারোলে তার মুক্তি নিতে আগ্রহ নেই বিএনপির। দলটির দাবি, জামিনের মাধ্যমে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে; যা তার প্রাপ্য সাংবিধানিক অধিকার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, শপথ নিয়ে সবাই চিন্তা ভাবনা করছে। আমাদের যাদের আগ্রহ আছে, আমরা তো জিজ্ঞাসা করি। আমরা এতো কষ্ট করে এমপি হয়েছি, আমাদের একটা চাওয়া আছে না?
দল যদি বলে শপথ নেওয়া যাবে না, এরপরও কি আপনারা শপথ নেবেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ অবস্থায় তো আমরা কিছু বলতে পারি না। সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পড়িনি। আমরা হঠাৎ করে কিছু করতে পারি না। মোদ্দা কথা হলো- আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করব না।
চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. হারুন উর রশীদ বলেন, ‘‘মহাসচিব আমাদের এক ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছেন, আবার আমাদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন যে, এই দুঃসময়ে আমরা নির্বাচিত হয়ে এসেছি। একই সাথে তিনি বলেছেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের খবর প্রচারিত হচ্ছে, সে দিক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সাথে আমরা যেন দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ না করি। তিনি বলেছেন, আমরা যেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত না নেই।’’