দেশে দিনদিন বেড়েই চলেছে শব্দদূষণ। ২০০৬ সালে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন হলেও বাস্তবে এর কোনও প্রয়োগ নেই। জনস্বার্থে এ বিধিমালা কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
রাস্তায় গাড়ির তীব্র হর্ন, জেনারেটরের শব্দ, মাইকের অপব্যবহার, বাড়িঘর নির্মাণের শব্দ, উচ্চ শব্দে গান শোনা, নিয়মিত হেডফোন ব্যবহার ও কলকারখানার শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুম না হওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, মেজাজ খিটমিটে হওয়াসহ নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
অথচ ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সকল স্থানে মোটরগাড়ির হর্ন বা সংকেত এবং মাইকিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর সূত্র ধরে কিছু কিছু অঞ্চলে ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ সাইন বা লেখা ঝোলানো হয়েছে। আবার ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) দায়ের করা রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ হাইকোর্ট হাইড্রোলিক হর্ন এবং উচ্চ শব্দযুক্ত বা বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোনও ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজন করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং গাড়িতে বাল্ব হর্ন সংযোজনের নির্দেশ প্রদান করেন। এ আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি প্রদানের বিধানও রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ মানুষকে সাময়িক বধির এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণ বধির করে দিতে পারে।
মানুষের ওপর শব্দের প্রভাব নির্ভর করে স্থায়িত্ব এবং পুনঃপুন আক্রান্ত হওয়ার মাত্রার ওপর এবং তার কারণে ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী উভয় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ তাৎক্ষণিকভাবেও মানবদেহে কিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি হয় ধীরে ধীরে। শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণক্ষমতা কমে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি।
শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে মাত্রাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কম মাত্রায় যতোটা ক্ষতি তার দ্বিগুণ ক্ষতি হবে বেশি মাত্রায় থাকলে। যারা শিল্প কারখানায় কাজ করেন তাদের এ বিষয়ে প্রোটেকশন নেওয়াসহ সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
যেমন ১১০ ডেসিবল শব্দে চামড়ায় শিহরণ, ১২০ ডেসিবলে মস্তিষ্কে যন্ত্রণা, ১৩০ ডেসিবলে বমি এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস, ১৪০ ডেসিবলে কানে প্রচণ্ড ব্যথা, ১৫০ ডেসিবেলে নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া এবং ১৯০ ডেসিবলে শ্রবণশক্তি একবারেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
যানবাহনের শব্দটাই মূলত শব্দ দূষণের প্রধান উৎস। এক্ষেত্রে বিআরটিএ (ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় ড্রাইভারদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সচেতন করা) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (যেহেতু তারা হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি করে) এবং পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর একটি সমন্বিত কাজ করতে পারে বলে আমি মনে করি।